সাধারণ বিমায় শীর্ষে গ্রীন ডেল্টা

 

পলাশ শরিফ: গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স দেশের শীর্ষ বেসরকারি সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠান। তিন দশক আগে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। ৩১ বছরের পথপরিক্রমায় তিন কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে শুরু করা গ্রীন ডেল্টা এখন ৮০ কোটি টাকা মূলধনের প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে ‘ইকুইটি পার্টনার’ হিসেবেও কাজ করছে গ্রীন ডেল্টা।

প্রতিষ্ঠানটির স্বপ্নদ্রষ্টা বিমাব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী। জার্মানির মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই তিনি বিমা ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা সম্পর্কে উল্লেখ করার মতো কোনো ধারণা না থাকলেও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে আছেন। কালের বিবর্তনে গ্রীন ডেল্টাই হয়ে উঠেছে সাধারণ বিমা শিল্পের পথপ্রদর্শক।

শুরুটা ভীষণ চ্যালেঞ্জের হলেও কর্মদক্ষতা, অধ্যবসায় আর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে স্বল্পসময়ের মধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত সময়ের সঙ্গে এগিয়ে থাকার চেষ্টাই কোম্পানিটিকে এগিয়ে নিয়েছে। এজন্য নিত্যনতুন বিমা পণ্য, দাবি পরিশোধের ঝামেলাহীন পদ্ধতি, তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার ও প্রশিক্ষিত জনবলসহ বেশকিছু বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শুধু একটি ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বেশকিছু খাতে বিনিয়োগ করেছে গ্রীন ডেল্টা। পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেনের জন্য গ্রীন ডেল্টা সিকিউরিটিজ লিমিটেড রয়েছে তাদের। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেড। স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে জিডি অ্যাসিস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। বিমা বিষয়ে প্রশিক্ষণে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রফেশনাল অ্যাডভান্স বাংলাদেশ লিমিটেডসহ চারটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এর বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব রয়েছে তাদের।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রীন ডেল্টার নেতৃত্বে ছিলেন নাসির এ চৌধুরী। ২০১৩ সালে কোম্পানিটির হাল ধরেন ফারজানা চৌধুরী। তিনি ডেল্টা-ব্র্যাক হাউজিংয়ের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পথচলার তিন দশকে এসে ছয় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারী নিয়ে একটি বৃহৎ পরিবার হয়ে উঠেছে গ্রীন ডেল্টা।

নতুনত্বের অংশ হিসেবে ‘সবার জন্য বিমা’ সেøাগান নিয়ে কাজ করা কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য একটি নবতর পণ্য ‘নিবেদিতা’। এটি শুধু নারীদের জন্য একটি সমন্বিত বিমা পলিসি। বাংলাদেশে এ ধরনের পলিসি এটিই প্রথম। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ এবং বৈষম্যের শিকার নারীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ওই পলিসি আনা হয়। নিবেদিতার মাধ্যমে একজন নারী এসিড-সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও অন্যান্য বিপদে কাভারেজ সুবিধা পাবেন। এছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় মৃত্যুসহ অন্য দুর্ঘটনায়ও

নারীরা ওই বিমার আওতায় আসবেন। শুধু বিমা সুবিধা নয়, একজন নারীর সঙ্গী হিসেবে কাজ করে তাদের আত্মনির্ভরশীল হতেও সহায়তা করছে নিবেদিতা। এজন্য অ্যাপসও তৈরি করা হয়েছে। নিবেদিতা ছাড়াও বেশ কয়েকটি নতুন পণ্য রয়েছে গ্রীন ডেল্টার।

তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে ‘নিরাময়’ নামে পরীক্ষামূলক স্বাস্থ্যবিমা শুরু করে গ্রীন ডেল্টা। এর সফলতার জেরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষামূলক ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প (এসকেএস)’ বাস্তবায়ন করছে গ্রীন ডেল্টা। পাশাপাশি আবহাওয়া সূচকনির্ভর শস্যবিমা প্রকল্প বাস্তবায়নেও কাজ করছে কোম্পানিটি।

১৯৮৯ সালে তালিকাভুক্ত গ্রীন ডেল্টার বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় ২৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় অর্ধেক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর হাতে আট দশমিক ২৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০