নিজস্ব প্রতিবেদক: গণশুনানিতে আসা যৌক্তিক সুপারিশ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে গ্রাহক পর্যায়ে আরোপিত বিদ্যুতের বাড়তি দাম ১০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার রক্ষা সংগঠন ক্যাব। না হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকির পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক’ ব্যয় কমিয়ে বিদ্যুতের দর সমন্বয়ের দাবি জানায় কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিইআরসি যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তা আমাদের দৃষ্টিতে আইনসম্মত হয়নি ও অযৌক্তিক। যদি তাদের কাছে প্রতিকার না পাই তাহলে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো গতি থাকবে না।
‘সরকার ও বিইআরসির কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে মূল্যবৃদ্ধির আদেশ বাতিল করা হোক। একই সাথে ক্যাবের প্রস্তাব অনুযায়ী মূল্য হ্রাস করা হোক। ৮-১০ দিনের মধ্যে যদি কোনো ব্যবস্থা সরকার না করে তাহলে আমরা ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করব।’
গত ২৩ নভেম্বর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, যা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। ক্যাব বলছে, বিইআরসির গণশুনানিতে তারা দাম কমানো যে সম্ভব, তা যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছিল। ফলে এখন দাম বাড়ানোয় গণশুনানি ‘অর্থহীন’ বলে প্রমাণিত হলো।
নয় বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর এ পর্যন্ত আটবার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসির জারি করা আদেশে ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক’ কারণ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম কমাতে ১৫ দফা সুপারিশ ও বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোক্তাস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম অনুসন্ধানের জন্য ভোক্তা প্রতিনিধি নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের দাবি তোলেন ক্যাবের ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণে ঘাটতি যৌক্তিক গণ্য করে বিইআরসি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এ কি প্রহসন, নাকি প্রতারণাÑএর বিচার চায় জনগণ। বিদ্যুতে মোট অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধি হচ্ছে ১৩ হাজার ২২ কোটি টাকা। ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে এই অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধির পুরোটাই বহন করে ভোক্তারা।’
বিইআরসি ইচ্ছামতো যা খুশি তা করতে পারে না বলে মন্তব্য করেন ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, বিইআরসি ভোক্তা ও উৎপাদকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সমন্বয় করবে। তাদের একটি রেগুলেশন আছেÑকীভাবে মূল্য নির্ধারিত হবে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে গণশুনাতিতে ভোক্তাদের যুক্তি-তর্ক ও তথ্যপ্রমাণ উপেক্ষিত হয়েছে।