ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প শেষ হচ্ছে নানির্দিষ্ট সময়ে

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের পানি সরবরাহের জন্য কোরিয়া সরকারের আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম ওয়াসা ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। এক হাজার ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে অক্টোবর ২০১৬ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ, ভূমি অধিগ্রহণ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে এ মেগা প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না। ফলে প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতীরে অবস্থিত (বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়ায়) আবাসিক এলাকা, কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেড শিল্প-কারখানাসহ সরকারি-বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পানি সরবরাহ করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বোয়ালখালীর ভাণ্ডালজুড়ির জৈষ্ঠপুরে দৈনিক ৬০ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতার ভূউপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ, ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন নির্মাণসহ দুই স্থানে রিজার্ভাব নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্যমতে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক শহর ও শহরতলিতে পানি সরবরাহের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেয়। প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তা করছে কোরিয়া সরকারের ইডিসিএফ ফান্ড (কেইডিসিএফ)। এজন্য ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ান সরকারের মধ্যে একটি ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়। মোট ব্যয় ১০৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে কেইডিসিএফ দেবে ৭৫৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, সরকারি খাত থেকে ২৬১ কোটি ৬৪ লাখ ও ওয়াসা ব্যয় করবে ২০ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ৬০ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতার ভূউপরিস্থ পানি শোধনাগার ও পাইপলাইন নির্মাণ তিনটি প্যাকেজে করা হবে। প্রথম প্যাকেজে বোয়ালখালীতে ৬০ এমএলডি শোধনাগার নির্মাণ, দ্বিতীয় প্যাকেজে কনভয়েন্স পাইপলাইন ১৫ কিমি, ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ হবে ৬০ কিমি এবং ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন নির্মাণ হবে ৫৩ দশমিক তিন কিমি। তৃতীয় প্যাকেজ কোরিয়া ইপিজেডে ও পটিয়ায় পানির রিজার্ভার নির্মাণ।

জানা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন স্থানে মোট ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে শোধনাগার নির্মাণের স্থানে ৪১ দশমিক ২৬ একর, রিজার্ভার নির্মাণ কাজে চার দশমিক ৯৭ একরÑযা জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রাক্কলনের পর্যায়ে। এছাড়া পটিয়া এলাকার দৌলতপুর মৌজায় কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় রিজার্ভার নির্মাণ কাজে দুই দশমিক ৯৪ একর ভূমি জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদনের পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনাধীন।

তবে ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুব আলম শেয়ার বিজকে জানান, ৫০ একর ভূমির মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৭ একর অধিগ্রহণ করার অনুমতি পাওয়া গেছে। বাকি তিন একর এখন অধিগ্রহণের অনুমতি পাওয়া যায়নি। এ ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। পটিয়া এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণে ২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে বর্তমান মূল্যে আগের দ্বিগুণ হতে পারে। এছাড়া রিজার্ভার নির্মাণে কেইপিজেডের  ভেতরে তিন একর জায়গা অধিগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ আগে অনুমতি দিলেও বর্তমানে সেখান থেকে সরে এসেছে। কেইপিজেডের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন করলেও আর্থিক মূল্য দিতে হবে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন বিকল্প পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়া ২০১১ সালের রেট অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য ধরা হয়েছে। বর্তমান মূল্য দেড় থেকে দুই গুণ বাড়তে পারে।

ওয়াসার ডিএমডি (ইঞ্জিনিয়ারিং) যুগ্ম সচিব রতন কুমার সরকার বলেন, বর্তমানে পরামর্শক দল কাজ করে যাচ্ছে, আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে তাদের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারে। তথ্য পাওয়ার পর আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। যেহেতু কাজ দেরিতে শুরু হচ্ছে, তাই প্রকল্প মেয়াদ বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।

ওয়াসার তথ্য ও প্রকল্পের বর্তমান চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোরিয়া সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তির ১৩ মাস পর জানুয়ারি ২০১৬ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ জুন পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। দীর্ঘ সময় পার হলেও কাজের তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। এখনও ভূমি অধিগ্রহণও শেষ হয়নি।

পরামর্শক দল আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের কথা থাকলেও সেটা নির্দিষ্ট নয়। বলা হয়েছে, পরামর্শক দল চূড়ান্ত তথ্য প্রদানের পর টেন্ডার হবে। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয় শুরু থেকে দরপত্র আহ্বানকারীরা কাজ পাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা শহরের পানির চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটাতে পারে। ওয়াসার চলমান বড় তিনটি প্রকল্পের মধ্যে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প একটি। এটির কাজ শেষ হলে আরও ৬০ এমএলডি পানি সরবরাহের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য দ্রুত কাজ করা যাচ্ছে না। কেইপিজেড আগে ভূমি দিতে রাজি হলেও এখন সরে এসেছে। তাই আমাদের বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে। এছাড়া ভূমির মূল্য আগের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে আশার দিক হলো, এ বছরের শেষ দিকে কাজ শুরু করতে পারলেই ২০২২ সাল নাগাদ শেষ করা যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০