জাকারিয়া পলাশ: হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য ৫০ কেজি ওজনের বস্তা চালুর দাবি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এ বছর। চলতি মৌসুমেই আলু সংরক্ষণের জন্য মালিকদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে সরকারি সংস্থাগুলো। এ নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে হিমাগার মালিকদের সতর্ক করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনও (বিসিএসএ) তৎপর হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন দেশের হিমাগারগুলোতে ৮০ কেজি ওজনের বস্তায় আলু সংরক্ষিত হয়ে আসছিল। চাল, ডাল, মরিচসহ অন্য খাদ্যপণ্যের জন্য ৫০ কেজির বস্তা চালু হলেও আলুর জন্য সর্বত্রই ৮০ কেজির বস্তা চলছিল। এতে হিমাগারে কর্মরত শ্রমিকরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কাজ করত। এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করে আসছিল অনেকে। এ নিয়ে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিসিএসএসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে অনেকে ৫০ কেজির বস্তা চালুর বিষয়ে আগ্রহী হলেও কৃষক, আলুর ব্যাপারী ও হিমাগার মালিকরা তা বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিলেন না। পরে এটি তদারকির বিষয়ে সক্রিয় হয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডাইফ)। গত ২৫ জানুয়ারি ডাইফের মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া এ-সংক্রান্ত ওই নির্দেশনা জারি করেছেন। তাকে বলা হয়, শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা অনুযায়ী দেশের সব পুরুষ শ্রমিকের ৫০ কেজি এবং নারী শ্রমিকের ৩০ কেজির বেশি ওজন বহন না করার বিধান আছে। এ বিষয় লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাইকোর্টের আদেশও রয়েছে। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে গৃহীত পদক্ষেপ ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাইফ কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বিসিএসএর সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন সম্প্রতি জানান, ‘অধিকাংশ হিমাগার মালিক এখনও ৫০ কেজির বস্তা চালু করতে প্রস্তুত নয়। তবে আমরা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, ৮০ কেজির বস্তা ব্যবহার করায় কোনো হিমাগারের বিরুদ্ধে মামলা হলে বিসিএসএ এর দায় নেবে না। এরই মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সক্রিয় হয়েছে। আমরা একে স্বাগত জানিয়েছি। তাছাড়া ৫০ কেজির বস্তা চালু হলে তার জন্য নতুন চাহিদা সৃষ্টি হবে। ওই চাহিদা মেটাতে আমরা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রতিটি বস্তা ৪২ টাকা মূল্যে হিমাগার মালিকরা কিনতে পারবেন। বিজেএমসির অধীনস্থ ১৭টি পাটকলে আলুর জন্য বিশেষায়িত বস্তা রয়েছে।’
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, আলু সংরক্ষণের উপযোগী ৪০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২৪ ইঞ্চি প্রস্থের ম্যাশ ব্যাগ মজুত আছে বিভিন্ন পাটকলে। হিমাগার মালিকদের কাছে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ১৭টি পাটকলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ম্যাশব্যাগ কিনে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।
অবশ্য হিমাগার মালিকরা বলছেন, আলুর ব্যাপারী ও কৃষকরা এখনও এ বিষয়ে সচেতন নন। যশোরের রজনীগন্ধা হিমাগারের উদ্যোক্তা এ বিষয়ে বলেন, কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তাছাড়া পাটকল থেকে নগদ অর্থ দিয়ে আমাদের বস্তা কিনতে হবে। এক লাখ বস্তার জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে মৌসুমের শুরুতেই। এটিকে হিমাগার মালিকরা একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। তবে মালিকদের অনেকেই এটি করার জন্য আন্তরিক।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের গত ২১ নভেম্বর শেয়ার বিজে হিমাগারে কর্মরত শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমপরিবেশ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে হিমাগার শ্রমিকরা: আলুর বস্তার ওজনসীমা ৫০ কেজি নির্ধারণের দাবি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিভিন্ন হিমাগারে আলুর বস্তার অস্বাভাবিক ওজন এবং তার কারণে শ্রমিকদের নানা সমস্যার কথা উঠে আসে। পরে এ-সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও মোহাম্মদ সলিমের সমন্বিত বেঞ্চ এর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন।