তিন মাসে দর বেড়েছে ১২০%

নিজস্ব প্রতিবেদক : লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না বঙ্গজ লিমিটেড। তবু টানা বাড়ছে শেয়ারদর। গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১২০ শতাংশের বেশি। লোকসানি কোম্পানিটির টানা দর বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তথ্যমতে, গতকাল সোমবার বঙ্গজ লিমিটেডের শেয়ার সর্বশেষ ২৬৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের চেয়ে সাত টাকা ৭০ পয়সা বেড়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি কোম্পানির শেয়ার ১৯৯ টাকা ৮০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। এর পর থেকে টানা বাড়তে থাকে বঙ্গজের শেয়ারদর। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ারদর ৬৬ টাকা বা ৩৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়তে শুরু করেছে। ওইদিন কোম্পানির শেয়ার ১২০ টাকা ৭০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারদর ১২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ১১১ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৬৬ টাকা ৪০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ২৩০ শতাংশ। এর মধ্যে গত তিন মাসেই কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান করা হলে জবাবে দর বাড়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গজ-এর জেনারেল ম্যানেজার (ফাইন্যান্স অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) ফিরোজ ইফতেখার মাসুম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

তবে শেয়ারটি নিয়ে কোনো চক্র মেতে উঠেছে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটি দুই বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। অথচ কোম্পানিটির দর বাড়ছে। একদিকে কোম্পানিটি স্বল্প মূলধনি, অপরদিকে শেয়ারসংখ্যাও কম। আর এ কারণে কোনো চক্র এর পেছনে রয়েছে কি না নিয়ন্ত্রক সংস্থার তা খতিয়ে দেখা উচিত।

কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের তথ্যানুসারে, বঙ্গজ লিমিটেডের ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে টার্নওভার হয়েছে ছয় কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ছয় লাখ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে টার্নওভার হয়েছিল পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় হয়েছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৩০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির টার্নওভার বাড়ার পাশাপাশি ব্যয়ও বেড়েছে, বিপরীতে শেয়ারপ্রতি লোকসান রয়েছেই। লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে না পারলেও কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা বাড়ছে। আর তা নিয়ে সংশয়ে আছে বিনিয়োগকারীরা।

লভ্যাংশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোম্পানিটি ২০১৩ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। পরের বছর ৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় শেয়ারহোল্ডারদের। ২০১৫ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিলেও পরের বছর লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়ে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে স্থানান্তর হয়। গত সমাপ্ত হিসাববছরেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয় বঙ্গজ।

পুঁজিবাজারে ১৯৮৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছয় কোটি ৩১ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৭ দশমিক ২৬ শতাংশ শেয়ার আছে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০