সোহেল রহমান: বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আর্থিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়ায় বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে আটকে গেছে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট’ তহবিলের অর্থ। ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় এক বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে ৫০৮ কোটি টাকা আমানত রেখেছিল ট্রাস্ট। এর মধ্যে দু’দফায় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা সুদাসলসহ উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ফারমার্স ব্যাংকে রক্ষিত জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের অর্থ সুদাসলে উত্তোলনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা চেয়েছে ট্রাস্ট। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) দীপক কান্তি পাল স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মোট ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা এক বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে রক্ষিত আছে। রক্ষিত আমানতের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ২২০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা নগদায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে ওই অর্থ পর্যায়ক্রমে পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৩ জানুয়ারি ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, পরবর্তীকালে ফারমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় রক্ষিত ১৭৩ কোটি ১২ লাখ টাকার একটি এফডিআর গত ২৯ জানুয়ারি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। সুদাসলে এটি নগদায়নের জন্য গত ১৪ জানুয়ারি চিঠি এবং চলতি মাসের ৬ তারিখে তাগিদপত্র প্রদান করা হয়। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংকের মতিঝিল শাখা অদ্যাবধি স্থায়ী আমানতসমূহ সুদাসলে নগদায়ন করেনি।
উল্লেখ্য, ঋণ প্রদানে অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়া বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক ও এর গ্রাহক এখন রয়েছেন মহাদুশ্চিন্তায়। অর্থ তুলতে গিয়ে ব্যাংকটির আমানতকারীদের বেশিরভাগই খালি হাতে ফিরছেন। অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়েও টাকা তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তারা টাকা পাচ্ছেন না।
রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে ২০১৩ সালে। কার্যক্রম শুরুর পর বছর না ঘুরতেই নতুন এ ব্যাংকটি ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের মেয়াদকালে ব্যাংকটিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছিল। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল ফারমার্স ব্যাংক।
গত বছর অক্টোবরে ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই বৈঠকে ব্যাংকটির সার্বিক আর্থিক চিত্র ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম তুলে ধরা হয়। এর জেরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতি পদত্যাগ করেন। এরপর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটিকে নতুনভাবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে ১১০০ কোটি টাকা মূলধনি ঋণ গ্রহণ ও ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।