সিরাজগঞ্জে তাঁতশিল্পের বর্জ্যে দূষিত খাল-বিল

শরীফ আহমদ ইন্না, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর ও কামারখন্দে তাঁতশিল্পের কাঁচামাল, সুতা, রঙসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে স্থানীয় পুকুর ও খাল-বিলে। অনেক অসাধু মিল মালিক আবার মটরের সাহায্যে সরাসরি ভূ-গর্ভস্থে পৌঁছে দিচ্ছে দূষিত পানি। দূষিত দুর্গন্ধ এসব পানি আবার যাচ্ছে নলকূপে। আর শোধন ছাড়াই দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা মনে করেন বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি ট্যাংকে অপসারণ করা না হলে এর প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর। তবে এ বিষয়ে তাঁত ও কারখানার মালিকরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও এনায়েতপুর তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এলাকা। এ তাঁত কারখানাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক সুতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। অধিকাংশ কারখানার নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। কারখানা থেকে নির্গত সোডা, সাবান, ডিটারজেন্ট, নিসপেল তেল, কস্টিক, মাসরাজড ওয়েল, ব্লিচিং পাউডার, নীল, গ্লেসসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বর্জ্যে মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে বেলকুচি ও এনায়েতপুর এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা। বর্জ্যে পানির ট্যাংকে অপসারণ না করে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে খাল বিলে।

প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য ফেলার ফলে এলাকার নলকূপেও রঙিন আর দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি উঠছে। যা দিয়ে রান্না করা তো দূরের কথা সাধারণ গৃহস্থালি কাজ করাও চলে না। বাধ্য হয়ে স্থানীয়দের অন্য জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আর এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

কামারখন্দ উপজেলার পাইকোশা বাজার এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, তাঁতশিল্পের কাঁচামালে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত পানির দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এলাকার খাল-বিলের পানি দূষিত হওয়ায় এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন।

বেলকুচি উপজেলার তাঁত মালিক আলহাজ ফজলার রহমান রুমি বলেন, পানি শোধানাগারের জন্য ১৯৯৭ সালে বেলকুচির তামাই গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিবেশ অধিদফতরের ওয়েস্ট মেনেজমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ইটিপি প্লানটির কাজ শুরু হয়। সে সময় এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনও দেয়া হয়। অথচ এটি আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পানি শোধানাগারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

ইতোমধ্যে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটারও চুরি হয়ে গেছে। রোগ-বালাই থেকে মুক্তি আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্লানটির দ্রুত সচল করার দাবি এলাকাবাসীর।

এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুরের আবদুল খালেক বলেন, অসাধু মিল মালিকরা মটরের সাহায্যে বর্জ্য মিশ্রিত পানি সরাসরি ভূ-গর্ভস্থে পৌঁছে দিচ্ছে। এ পানি আবার যাচ্ছে নলকূপে। এগুলো পান করে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা।

বেলকুচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওলিউজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে প্রসেস মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্যরে পানি ফেলা হয়। এ জন্য একটি ইটিপি প্লান স্থাপনের প্রক্রিয়া গহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০