প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
রাজনৈতিক ও আবেগপ্রবণতাকে যদি প্রাধান্য না দেওয়া হয়, তাহলে সব দিক বিবেচনায় কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে চীনারাই। চীনের বড় কোম্পানিগুলো এখানে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করলে বাজার হয়ে যাবে অত্যন্ত পেশাদার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও এমরান হাসান।
মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত এক মাস ধরে পুঁজিবাজার নি¤œমুখী ধারায় রয়েছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে বাজারে অধিক পতন হয়েছে। এর মূল কারণ বাজারের প্রতি মানুষের আস্থার ঘাটতি। তাছাড়া ২০১৮ সাল জাতীয় নির্বাচনের বছর। সাধারণত নির্বাচনের বছরে মানুষ একটু উদ্বিগ্নই থাকে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে। বর্তমানে দেশের মানি মার্কেটেও একটু সংকট চলছে। তাত্ত্বিকভাবেও সত্য যে, মানি মার্কেটে যদি তারল্যের সংকট থাকে তাহলে ডিপোজিটের হার বেড়ে যায়। এর মধ্যে অনেকগুলো ব্যাংকের বড় বড় আর্থিক কেলেংকারি হয়েছে। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকেও রেকর্ড পরিমাণ তহবিল তছরূপের ঘটনা ঘটেছে। তারা একজন ব্যক্তিকে ঋণ দিয়ে তা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে দেখিয়েছে। একইভাবে ফারমার্স, বেসিক ব্যাংকসহ অনেকগুলো ব্যাংক এ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকট আছে। ব্যাংকগুলোর কেন ডিপোজিট রেট বাড়ল? কারণ ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। যখন ডিপোজিট রেট বাড়াবে তখন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখবে। ব্যাংকের ডিপোজিট রেট কম হলে মানুষ বেশি মুনাফার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতো। অনেকেই মনে করছেন বাজার ভালো হতে আরও কিছু সময় নেবে। তবে আমি বাজারের ব্যাপারে কিছুটা আশাবাদী। যদি দেশের জনগণ বিশ্বাস করে জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে হতে যাচ্ছে। সরকারের আচরণ যদি গণতান্ত্রিকভাবে জনগণ পর্যবেক্ষণ করে, বাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে বিশেষ করে ‘আইসিবি’কে যদি সরকার নির্দেশনা দেয়, তারা যেন বাজারকে সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু পুঁজিবাজারের দৃশ্যটি ভিন্ন হবে। আর এ বিষয়গুলো যদি সঠিকভাবে হয়ে থাকে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আবার এ বাজারে বিনিয়োগ করবে। তখন পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক ও আবেগপ্রবণতাকে যদি বিবেচনায় না ধরি তাহলে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার চীনারাই হয়ে যাবে সবদিক বিবেচনা করে। আর এটি যখন হবে তখন এ বাজারটি হয়ে যাবে অত্যান্ত প্রফেশনাল এবং চাইনিজ বড় বড় কোম্পানিগুলো তখন এখানে ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগে করবে।
এমরান হাসান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার নেতিবাচক অবস্থায় থাকার পেছনে মানি মার্কেটকে একটি বড় কারণ বলে মনে করি। মানি মার্কেটের কারণে যে পুঁজিবাজার বা ইকুইটি মার্কেট প্রভাবিত হয় সেটি শুধু আমাদের দেশে নয় সারা পৃথিবীতেই হয়ে থাকে। সব জনপ্রিয় ফান্ড ম্যানেজাররাও কিন্তু একই কথা বলে গেছেন যে, মানি মার্কেটে যদি সুদের হার বেশি থাকে তাহলে ইকুইটি মার্কেট প্রভাবিত হবেই। বিনিয়োগকারীরা যখন ১০-১২ শতাংশ হারে এফডিআর রেট পাবেন তখন তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে তেমন আগ্রহী হন না। তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের মনোভাব কাজ করে যে, তারা কেন ঝুঁকি নেবেন? যেখানে ১০-১২ শতাংশ নিশ্চিত লভ্যাংশ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও একই মনোভাব পোষণ করেন।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম