নিজস্ব প্রতিবেদক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। তবে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অপেক্ষা এখনই ফুরাচ্ছে না। গতকাল রোববার দুপুরে এক ঘণ্টার বেশি সময় শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, জজ আদালত থেকে এ মামলার নথি এলে তা দেখে আদালত আদেশ দেবেন।
এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি একই বেঞ্চ খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশ নি¤œ আদালতে গেছে রোববার। ফলে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন কি না, তা জানতে আরও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
অবশ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এতিমখানা মামলা ছাড়াও ৩৪টি মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। সেসব মামলায় তাকে এখনও গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
এর আগে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। ১ হাজার ১৬৮ পৃষ্ঠার ওই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা।
গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটায় বিচারকরা শুনানির জন্য এজলাসে আসেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
খালেদা জিয়ার জামিনের আরজি জানিয়ে এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে বলেন, মামলায় পাঁচ বছরের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সাজা। এ আদালতের রীতি ও ক্ষমতা আছে সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন দেওয়ার। তাছাড়া তিনি একজন বয়স্ক নারী। তাই আমরা তার জামিন চাচ্ছি।
এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারেÑএটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী এবং তিনি অসুস্থ বলে আসামিপক্ষ যুক্তি দেখালেও তার সমর্থনে কোনো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বা কাগজপত্র দাখিল করেনি। ফলে তিনি জামিন পেতে পারেন না। বরং উচ্চ আদালত এ মামলায় বিচারিক আদালতের যে নথি তলব করেছেন, তা এলে পরে এ বিষয়ে আদেশ হতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও শুনানিতে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ৯ বছরের মতো সময় লেগেছে মামলাটি শেষ হতে। আজকে জামিন দিয়ে দিলে বলা যাচ্ছে না আদৌ এর আপিল শুনানি হবে কি না। দ্রুততম সময়ে আপিল শুনানি শুরুর তাগিদ দেন তিনি।
শুনানি শেষে বিচারক বলেন, জামিন বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। বিচারিক আদালতের নথি এলে পরে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফএম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস ও খায়রুল কবির খোকনকেও আদালতে দেখা যায়।
পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের একটি রায় আছে। সে অনুযায়ী আসামির শর্ট প্রিজন হলে জামিন না দিয়ে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশনা আছে। কোনো কারণে আপিল শুনানি বিলম্বিত হলে জামিনের বিষয়টি কনসিডার করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া দুই মাস সাত দিন জেলে থেকেছেন। ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে বের হয়ে এসেছিলেন। সে হিসেবে ওই সময় তিনি এ মামলায় ৫০ দিন কারাভোগ করেছিলেন। আর রায়ের পর আজ (গতকাল) পর্যন্ত ১৭ দিন; অর্থাৎ মোট ৬৭ দিন তিনি জেলে আছেন।