শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (পিএনবি) ঋণ কেলেঙ্কারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। দেশটির পুঁজিবাজার থেকে তাদের অর্থ তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। চলতি মাসেই শেয়ারবাজার থেকে ১০ হাজার কোটি রুপির বেশি তুলে নিয়েছেন তাদের একাংশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নীরব মোদির ঋণ কেলেঙ্কারির কারণেই এমনটা হচ্ছে। খবর আজকাল।
প্রতিবেদন মতে, পিএনবির এ ঋণ কেলেঙ্কারি প্রকাশের আগে জানুয়ারি মাসে ভারতীয় শেয়ারবাজারে ১৩ হাজার ৭৮০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছিলেন বিদেশিরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি নীরব মোদির ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আসে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলে নিতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে ১১ হাজার ৪০০ কোটি রুপির কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাওয়ার পর জালিয়াতি রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর্থিক জালিয়াতি রুখতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সরকারের অংশীদারী কমানোর দাবি তুলেছে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) মতো বণিক সংগঠনগুলো। প্রতারণা রুখতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ির পাশাপাশি দ্বৈতনীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে তারা। ব্যাংকের নজরদারি এবং পরিচালন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথাও বলেছেন। একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারি সামনে আসায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসেছেন। ব্যাংকের এ তৎপরতায় আবার শিল্প খাতে চিন্তা বাড়ছে, ঋণ পাওয়া কি এবার থেকে কঠিন হয়ে যাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগে পিএনবির ১১ হাজার ৪০০ কোটি রুপির কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেয়েছে। এরপর ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অব কমার্সের (ওবিসি) ৩৯০ কোটি রুপির দুর্নীতি সামনে এসেছে। এ অবস্থায় ঋণদানের নীতি বদলের কথা ভাবতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া নীতি নিলেও শুধু হবে না। এর সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মী জড়িত কিনা সেদিকেও নজর রাখতে হবে। তাহলেই ব্যালান্স শিটের গরমিল ধরা পড়বে।
এ ঘটনায় গুজরাটের সুরাটের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বেন কিনা এমন প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তারা নীরব?কাণ্ড বা ব্যাংকের তৎপরতা নিয়ে বিচলিত নন। তারা পরিষ্কার জানিয়েছেন, ব্যাংকের ওপর ভরসা আছে। তাই হীরে কারবারি নীরব মোদি আর তার মামা মেহুল চোকসির জালিয়াতির জেরে ঋণদানে ব্যাংক কড়াকড়ি করলেও তাতে ব্যবসার কোনো ক্ষতি হবে না। হীরে কাটা, পালিশ সবই ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের অন্তর্গত। সুরাটের অনেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকদিনই ব্যবসা করছেন তারা। তাদের আশা, নিয়ম কড়া হলে রাঘববোয়ালদের অসুবিধা হলেও তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে, গত রোববার ফের পিএনবির নির্বাহী পরিচালক কেভি ব্রহ্মাজি রাওকে জেরা করতে শুরু করেছে সিবিআই। এর আগেও একদিন তাকে জেরা করা হয়েছিল। সন্দেহ বাড়ছে, নীরব মোদি এবং মেহুল চোকসির জালিয়াতিতে তিনিও জড়িত। ৩৫ বছর আগে বিজয়া ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ব্রহ্মাজি রাও। মুম্বইসহ একাধিক জায়গায় নিযুক্ত ছিলেন। তার সূত্র ধরেই কেলেঙ্কারির তথ্য সংগ্রহ করতে চায় সিবিআই। নীরব মোদির ব্যবসা ছড়িয়ে আছে বিশ্বের নানা দেশে। সেখান থেকেও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।