নানামুখী সংকটে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

মাসুদ আলম, কুমিল্লা: কুমিল্লা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (কুমিল্লা ইপিজেড) চাহিদা অনুযায়ী শিল্প প্লট তথা স্থান সংকুলানের অভাবে আগ্রহ হারাচ্ছেন দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ক্রমাগত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট, শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য শিল্প প্লট, স্থান সংকুলান, ইপিজেড সম্প্রসারণ, স্থানীয় শিল্পে উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়া, কঠোর নিয়ম-কানুন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় এবং অবকাঠামো সমস্যাসহ নানা সংকটের কারণ কুমিল্লা ইপিজেডের বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে তুলনামূলক হারে কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়ছে না।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা ইপিজেডে আগ্রহী বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিদেশি কর্মরত লোকদের সঠিক আবাসন এবং আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় রাজনীতির বিভিন্ন উপ-দলীয় কোন্দল ইপিজেডকেন্দ্রিক বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসায় প্রভাব বিস্তার করতে চায়। শ্রমিকদের বিভিন্ন সময়ের বেতন-ভাতা ও দাবি আদায়ের আন্দোলনে সুযোগ নেয় বহিরাগতরা। এতে করে কারখানার মালিকরা ক্ষতির শিকার হয়।

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেপজার সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের ১৫ জুলাই কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকার ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই ইপিজেডে দেশি, বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগীসহ সর্বমোট ৪২টি পণ্য উৎপাদিত কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি রয়েছে ২৩টি, দেশি ও বিদেশি যৌথ উদ্যোগী কোম্পানি রয়েছে সাতটি এবং বাংলাদেশি কোম্পানি রয়েছে ১২টি। এ ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, ইউকে, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ ১৩টি উন্নত দেশে রফতানি করা হয়। এখানে ইটিপির আওতায় ইপিজেডের ৪২ কোম্পানির বর্জ্য পরিশোধনকরণ করা হয়। বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডের ৪২টি কোম্পানিতে ২৮ হাজার ৫৬৮ জন পুরুষ ও নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এছাড়া ১৯৫ জন্য বিদেশি জনবল কর্মরত রয়েছে।

কুমিল্লা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্বে)  মো. তানভীর হোসাইন জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি স্থানে কুমিল্লা ইপিজেডের অবস্থান হওয়ায় পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ইপিজেড থেকে সামগ্রিক বন্দরে যোগাযোগে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, সুলভে কাঁচামাল প্রাপ্তি এবং শ্রমিকের প্রতুলতা ও সহজলভ্যে পাওয়া যায় বলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে আগ্রহী। সরকারের উদ্যোগী ভূমিকায় কুমিল্লা ইপিজেডকে দেশের এক নাম্বার ইপিজেডে রূপান্তর করা সম্ভব। কারণ ইপিজেডের পাশেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বিমানবন্দরটি। যদি ইপিজেড সম্প্রসারণ, শিল্প প্লট তথা স্থান সংকুলানের সমস্যা সমাধান করে ছোট পরিসরে হলেও ইপিজেডের সঙ্গে বিমানবন্দরটি চালু করা হয়, তাহলে রফতানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। কুমিল্লা ইপিজেডে বর্তমানে ২৩৯টি প্লট রয়েছে। ২০১৩ সালে একটি প্রস্তাব হয়েছিল সীমানা বাড়িয়ে ৫৩১টি প্লট করার। বিশ্বব্যাংক ভূমি সম্প্রসারণের অর্থায়ন করবে। কিন্তু চার বছর অতিক্রম করলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

মো. তানভীর হোসাইন জানান, কুমিল্লা ইপিজেডে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার, যা সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে। এ ইপিজেডে গ্লোবাল ব্র্যান্ড, ক্যানন ক্যামেরার ব্যাগ, ফটোকপিয়ার ড্রাম, উৎপাদন করা হয়। এছাড়া সোয়েটার, ডেনিম ফ্যাব্রিকস, গার্মেন্টস, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, এইচএনএম, সিএন্ডএ, জুতা, জিপার, সুতা, পলিব্যাগ, প্লাস্টিকসামগ্রী ও কাপড় ছাড়াও রয়েছে ব্যতিক্রম পণ্য হেয়ার অ্যাকসেসরিজ, মেডিসিন প্লেনার বক্স ও খেলনা তৈরির কারখানা।

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (বেপজা) মহাব্যবস্থাপক (গণসংযোক) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, কুমিল্লা ইপিজেডের শুরু থেকে বিনিয়োগ ও রফতানি বেড়ে আসছে। পণ্য উৎপাদনে নতুন নতুন কারখানা যোগ হয়েছে। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী শিল্প প্লট তথা স্থান সংকুলানের অভাব রয়েছে। এই ইপিজেড সম্প্রসারণ করতে হবে। তাহলে আসতে আসতে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়বে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০