হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন শিরোনামটি। এখানে ইঁদুরের কথাই বলা হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের কাছে ইঁদুর ব্রাত্য। বিরক্তিকর। তবে অনেক বিজ্ঞানীর কাছে অত্যন্ত উপকারী প্রাণী এটি। বিশেষ করে বড় ইঁদুর।
বিশ্বে তিনজনের মধ্যে একজন মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত। স্টপ টিবি পার্টনারশিপের তথ্য এটি। এ হিসেবে বিশ্বব্যাপী দুই মিলিয়ন যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। সংক্রামক রোগের মধ্যে তুলনামূলক বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে যক্ষ্মার কারণে। বর্তমানে প্রচলিত টিবি শনাক্তকারী প্রক্রিয়া বেশ জটিল, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। একই সঙ্গে সব সময় সঠিক তথ্যও পাওয়া যায় না প্রচলিত ব্যবস্থায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়Ñপূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে টিবি শনাক্তের জন্য স্ক্রিনিংয়ের ওপর অনীহা রয়েছে। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আর্থিক অসঙ্গতি তো আছেই। কারাগারগুলোর অবস্থা দেখুন, এসব স্থানে টিবির প্রাদুর্ভাব অন্য যে কোনো জায়গার তুলনায় দশগুণ বেশি। তাই যক্ষ্মার মহামারি থেকে রক্ষা পেতে ইঁদুরের দারস্থ এবার বিজ্ঞানীরা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আফ্রিকান ইঁদুরকে বেছে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বেলজিয়ামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ ধরনের ইঁদুরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তানজানিয়া ও মোজাম্বিকের কয়েদখানার যক্ষ্মা রোগীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য সময় লেগেছে মাত্র কয়েক মিনিট।
চার সপ্তাহ বয়সে শুরু হয় ইঁদুরের কঠিন প্রশিক্ষণ। এদেরকে বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত করে তোলা হয় এবং মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মানুষের কফ বা শ্লেষ্মায় যক্ষ্মার উপস্থিতি রয়েছে কি-না, সে বিষয়টি বোঝানো হয়। এদের কাছে ১০ ধরনের কফ বা থুতুর স্যাম্পল তুলে ধরা হয়। যখন এ ধরনের কোনো স্যাম্পলে যক্ষ্মার উপস্থিতি টের পায় ইঁদুররা, তারা এর ওপর তিন সেকেন্ড গন্ধ শুঁকতে থাকে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন এতে যক্ষ্মার উপাদান আছে কি নেই। এ ধরনের গবেষণা নিশ্চয়ই চমকপ্রদ।
ইতোমধ্যে অবিশ্বাস্য রকমের সফলতা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে ত্বরিতগতিতে যক্ষ্মা শনাক্তকরণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। তারা বলেছেন, এভাবে শতভাগ যক্ষ্মা রোগী নিরূপণ করতে পারছেন। আর্থিক দিক বিবেচনায় এ ধরনের ইঁদুর বেশ সাশ্রয়ী এবং একবার প্রশিক্ষণের পর মাত্র ২০ মিনিটে ১০০ স্যাম্পল স্ক্রিন করতে পারে এরা। অর্থাৎ প্রচলিত পদ্ধতিতে যক্ষ্মা শনাক্তের জন্য একজন বিজ্ঞানীর যেখানে একদিন লেগে যায়, সেখানে মাত্র সাত মিনিট লাগে ইঁদুরের।
সংগত কারণে যক্ষ্মা শনাক্তকরণে এ ইঁদুর পদ্ধতি বিশাল গুরুত্ব বহন করছে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসআইডি) ও তানজানিয়াভিত্তিক বেলজিয়ান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাপোপো’র আর্থিক সহায়তায় অসংখ্য ইঁদুর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যেন কয়েদিদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণ সহজ ও সাশ্রয়ী হয়।
ওয়ান অবলম্বনে রতন কুমার দাস