জীবনের তাগিদে মানুষ বিচিত্র ধরনের পেশা বেছে নেয়। জীবন আর জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তেমনি বরগুনার তালতলী উপজেলার চার শতাধিক জেলে পরিবারের জীবন চলে কাঁকড়া শিকার করে। উপজেলার ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চলে কাঁকড়া শিকার করে সংসার চলে তাদের। প্রতিদিন জেলেরা বনের গভীরে গিয়ে কাঁকড়া শিকার করেন। বনের খালের গর্তে রড দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কাঁকড়া শিকার করেন তারা। এক ধরনের লম্বা রশির মাথায় ইট ও বড়শি বেঁধে নদীতে ফেলেও ধরা হয় কাঁকড়া। বিশেষ এক ধরনের জালও ব্যবহার করা হয়। ওপরে তোলার পর কাঁকড়াগুলোর হিংস্র চিমটি দুটি বেঁধে রাখা হয়। কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হন জেলেরা। রয়েছে ডাকাতের ঝামেলাও।
কাঁকড়া শিকার করে দিনে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করেন একেক জেলে। প্রকারভেদে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে আড়তদারের কাছে বিক্রি করা হয়।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আয়তন ৯ হাজার ৯৭৫.০৭ একর। এ বনের মধ্যে ৯টি খাল রয়েছে। খালগুলো হলো বান্দ্রা, মেরজে আলী, সিলভারতলী, ফেচুয়া, গৌয়মতলা, কেন্দুয়া, সুদির, বগীরদোন ও চরের খাল। বর্ষা মৌসুমে বনাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়। এ খালগুলোর মধ্যে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবহমান। খালের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়া গর্ত তৈরি করে।
পানির ওপর জীবনসংগ্রামে ঠিক কখন জড়িয়েছিলেন তা মনে নেই আবদুল্লাহ আল রনি ও শামিম শেখের। দুজনেই তাদের বাবার হাত ধরে এসেছিলেন এ পেশায়। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে তারা এখন সংসারী। আজও এ পেশায় আছেন।
নিজামুর রহমান ও মো. জলিল হাওলাদার জানান, কাঁকড়া শিকার করে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করি। এ দিয়েই চলে সংসার। তারা আরও জানান, গহীন অরণ্যের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া শিকার করতে হচ্ছে। এ জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও বন্যপ্রাণী রয়েছে। এদের মোকাবিলা করেই কাজ করতে হয়।
শিকারী আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘মোগো কোনো জায়গাজমি নাই, তাই কারহা (কাঁকড়া) শিহার করইয়্যা খাই।’ সোহেল তালুকদার জানান, কাঁকড়া শিকার করতে ফরেস্ট কর্তৃপক্ষকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কাঁকড়া শিকার করতে দেয় না। মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মোগো আর কোনো কাম নাই; কাড়হা ধইর্যা সোংসার চালাই। প্রতিদিন কাড়হা ধরলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাহা পাই।’
তালতলী সকিনা বিট কর্মকর্তা মো. জাহিদ প্রামাণিক বলেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিÑএ দু’মাস প্রজনন মৌসুম। এ সময় কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। এছাড়া বাকি সময় কাঁকড়া ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে জেলেরা।
মো. সোহাগ বিশ্বাস, বরগুনা