পাহাড় ট্রেইল পার্ক

ঝরনার মিরসরাই ঝরনা আর পাহাড় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলাকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। প্রকৃতি যেন অকৃপণভাবে সাজিয়েছে উপজেলাটিকে।

খৈয়াছড়া ঝরনা

ঝমঝম শব্দে বয়ে চলেছে খৈয়াছড়া ঝরনা। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি। যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা ও অবসাদ ভুলিয়ে পর্যটককে সজীব করে তোলে এই ঝরনা। পাহাড়ের সবুজ রং ও ঝরনার স্বচ্ছ জল মিলেমিশে একাকার হয়েছে মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝরনায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। যারা একবার খৈয়াছড়া ঝরনা দেখেছেন তাদের মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দেয় বারবারÑদেশে এমন

নয়নাভিরাম ঝরনা দ্বিতীয়টি আর আছে কি না। খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর এমন নামকরণ করা হয়েছে। প্রকৃতি ও প্রেমের মিশেলে তৈরি বাস্তব এক পটভূমি।

নয়নাভিরাম ঝরনাটি পর্যটকদের টানছে অবিরাম। এখানে বেড়াতে এলে চোখে পড়ে ঝরনার পানিতে লাফালাফি করছে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ। কেউবা ঝরনার পানিতে গা ভিজিয়ে শীতল করে নিচ্ছেন নিজেকে। আর কেউবা ঝরনার আট স্তরের সর্বোচ্চ স্তরে উঠতে ব্যস্ত। এখানে আসা অনেক পর্যটকের মতে, মাধবকুণ্ড ও শুভলং ঝরনার চেয়েও রূপ-মাধুর্য বেশি এই ঝরনার। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে এই ঝরনার অবস্থান। বাঁশের সাঁকো, ধানক্ষেত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, ছড়া ও চারটি সুউচ্চ পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে এর কাছে।

 

মহামায়া ইকো পার্ক

এখানে রয়েছে একটি বিশাল লেক। একটি ঝরনা। বর্তমানে এটি স্থানীয় এক ইজারাদারের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। মহামায়া কৃত্রিম লেক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের রূপে ও মাধুর্যে মুগ্ধ করেছে। মহামায়া লেক বাংলাদেশের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় পর্যটনস্থান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ এটি। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ লেকটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘি বাজার থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি অপরূপ সুন্দর। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মহামায়া লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা। স্বচ্ছ জলাধারের চারপাশ সবুজ চাদরে মোড়া। মনে হয় কোনো সুনিপুণ শিল্পীর কারুকাজ।

নীলাভ জলরাশিতে ডিঙি নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে। প্রতিটির ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে পানির কলকল ধ্বনিতে মুখর মহামায়া লেকে নৌভ্রমণ আনন্দদায়ক। মহামায়া লেকের চারপাশে পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা পর্যটককে মুগ্ধ করে। গোধূলিলগ্নে সূর্য যখন অন্তিম নীলিমায় ডুবে যায়, তখন লেকের পরিবেশ চমৎকার রূপ ধারণ করে। পিকনিকের জন্য মহামায়া দারুণ একটা জায়গা। এখানে এসে রান্নাবান্না করেও খেতে পারেন। তা ছাড়া অনেকে লেকের কোলে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ভূমিতে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠে।

 

নাপিত্তছড়া ট্রেইল

এখানে একসঙ্গে তিনটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি ও বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। ঝরনাগুলোয় যাওয়ার ঝিরিপথটাকে ট্রেইল বলা হয়। বিশাল পাথরের চাঁইয়ের ভেতর দিয়ে নেমে এসেছে ছড়ার পানি। দু’পাশে উঁচু পাহাড়ের দেওয়ালে যেন সেঁটে আছে সবুজ গাছেরা।

এখানে দেখতে পাবেন গাছে গাছে হনুমানের লাফালাফি। দেখতে পাবেন বনমোরগ। নানারকম চেনা-অচেনা পাখির কলতান শুনতে পাবেন।

মুহুরী প্রজেক্ট

ফেনীর জেলা সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় মুহুরী সেচ প্রকল্প। সিডা, ইইসি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় জাপানের সিমুজু কোম্পানি ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে। ফলে ২০ হাজার ১৯৪ হেক্টর এলাকায় সেচ সুবিধা ও ২৭ হাজার ১২৫ হেক্টর এলাকা সম্পূরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে। মুহুরী সেচ প্রকল্পকে ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে উঠেছে বিনোদন ও পিকনিক স্পট। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণপিপাসু মানুষ বেড়াতে আসে এখানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি মন ভরিয়ে দেয়। বাঁধের দু’পাশ নিচ থেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো। এর ওপরদিকে দূর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরীর জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায়।

 

শহিদুল ইসলাম

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০