কৌশলগত অংশীদার চূড়ান্তে আরও তিন মাস সময় পেল ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত অংশীদার (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) চূড়ান্ত করতে আরও তিন মাস সময় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ডিএসইর কৌশলগত অংশীদারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আগামী ৮ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আগের বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষদিনে কমিশন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় বলে জানা গেছে।

এদিকে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ প্রস্তাবকে সামনে রেখে চুক্তি করে কৌশলগত অংশীদার চূড়ান্ত করতে কাজ করছে ডিএসই। ইতোমধ্যে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব ডিএসইর বোর্ড সভায় অনুমোদন করে বিএসইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে, যা বিএসইসির অনুমোদনের পরে চূড়ান্ত হবে।

অন্যদিকে ডিএসইর দেওয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। প্রতিবেদন দাখিলেও এ কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে পাঁচ কার্যদিবস। কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, মাহবুবুল আলম, ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও আনোয়ারুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিএসইসি সর্বশেষ আমাদের ৮ মার্চ (গতকাল) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, তবুও এ সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করতে পারিনি। বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার আমরা কমিশনে তিন মাস সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করি। কমিশন আজ বৃহস্পতিবার (গতকাল) তিন মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছে।’ এ সময়ের মধ্যে ডিএসই কৌশলগত অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাজেদুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ‘চায়না কনসোর্টিয়ামের বিষয়ে বিএসইসি কিছু ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নির্ধারিত সময়েই জবাব দিয়েছি।’

জানা গেছে, গত বুধবার কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের শেষ দিন ছিল। ডিএসইর প্রস্তাব ও বিএসইসির চাওয়া ব্যাখ্যার জবাব পর্যালোচনা করতে কমিটির আরও সময় দরকার। তাই কমিটির আহ্বায়ক বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। এর পরে গত বুধবার কমিশন সভায় পাঁচ কার্যদিবস সময় বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

চায়নার কনসোর্টিয়ামের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে অত্যন্ত ১৫টির বিষয়ে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি ব্যাখ্যা চেয়ে ডিএসই’কে চিঠি দেয়। গত রোববারের মধ্যে এ ব্যাখ্যার জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ডিএসই কমিশনের কমিটির কাছে ব্যাখ্যার জবাব জমা দেয়।

কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসইর আহ্বানে দুটি কনসোর্টিয়াম দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে চীনের দুই এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম ছাড়া অপর দরদাতা ছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাকের কনসোর্টিয়াম। দুটি প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।

ওই সিদ্ধান্তের পর গত সপ্তাহে বাজারে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়, যার প্রভাবে সূচক পড়তে থাকে। চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব গ্রহণ করার যে সিদ্ধান্ত ডিএসই নিয়েছে, তা আবারও যাচাই-বাছাই করতে বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

ওই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক বিবৃতিতে বলা হয়, দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন জোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।

এরপর বিএসইসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই না করে এ ধরনের চূড়ান্ত মন্তব্য টিআইবির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনবে। সেইসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করবে। অন্যদিকে এনএসইর নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা করে ২৫ দশমিক এক শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। পাশাপাশি তারা কারিগরি সহযোগিতার কথা বললেও কত টাকা ব্যয় করবে তার উল্লেখ ছিল না সেখানে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০