সংকটকালে আইসিবির তৎপরতা নেই কেন?

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

পুঁজিবাজারে আইসিবির কাজ হচ্ছে বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখা। কিন্তু বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইসিবির কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তারা ব্যাংক খাতের তিন হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে সেই টাকা স্থানান্তর করেছে সরকারি কোনো এজেন্সি বা ব্যাংকে; এখন বলছে, পুঁজি সংকটে আছে। প্রশ্ন হচ্ছেÑএমন অবস্থায় তারা পুঁজিবাজারের ভারসাম্য বজায় রাখবে কীভাবে? আর এমন যদি চলতে থাকে তাহলে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করি। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও মো. এমরান হাসান এবং ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আনিসুর রহমান, এফসিএ।

মো. এমরান হাসান বলেন, এ বছর জানুয়ারির ৩ তারিখে পুঁজিবাজারের সূচক ছয় হাজার ৩০০ অতিক্রম করেছিল। তখন থেকে গত রোববার পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশ বাজার পতন হয়েছে। এই অল্প সময়ে ১০ শতাংশ সূচকের পতন হওয়া কিন্তু বড় ব্যাপার। যেখানে ২০১৬ সালে বছরজুড়ে সূচক বেড়েছিল আট দশমিক আট শতাংশ,  সেখানে দুই মাসের একটু বেশি সময়ে বাজার সংশোধিত হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। তাই এটিকে একটি বড় সংশোধন বলে মনে করি। তবে স্টেকহোল্ডারদের এমন কিছু বলা ঠিক নয়, যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বেশি নষ্ট হয়। তাই এ ব্যাপারে কোনো বিবৃতি দেওয়ার আগে সবার সচেতন হওয়া অনেক জরুরি বলে মনে করি। তাছাড়া ২০১৭ সালে আইপিওতে আসা নতুন কোম্পানিগুলোর প্রথম দিনেই অযৌক্তিক দরবৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন হতে দেখেছি। এক্ষেত্রে যারা শেয়ার কিনছে তারা দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো কারসাজি করছে কি না সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত। তবে পাঁচ-ছয় মাস পরে যখন ওই শেয়ারটি নিয়ে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জবাবদিহি করতে হচ্ছে তখন দেখা যায়, শেয়ারটির দর সংশোধিত হওয়ায় অনেক সাধারণ বিনিয়োকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।  তাই শুরু থেকেই যদি কোম্পানিটি সম্পর্কে জোরালোভাবে তদন্ত করা হয় তাহলে পরে এ ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেনের সম্ভাবনা থাকে না। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। তবে আতঙ্কিত না হয়ে ভালো শেয়ার দেখে বিনিয়োগ করুন। কারণ বাজারের বর্তমান অবস্থা নতুন বিনিয়োগের জন্য ভালো সময় বলে মনে করি।

মো. আনিসুর রহমান বলেন, যখন নতুন কোনো কোম্পানি বাজারে এসে সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরু করে, তখন যাদের কাছে ওই শেয়ারটি রয়েছে তারা একটি প্রাইজ তৈরি করে এবং একটি পর্যায়ে শেয়ারটি বিক্রি করার জন্য কিছুদিন আগে থেকে সেটি নিয়ে কারসাজি করে। আর এই কারসাজির সঙ্গে ইস্যু মানেজার, ইস্যুয়ার কোম্পানি এবং সম্ভবত কিছু নীতিনির্ধারকও জড়িত থাকে। এজন্য আইপিওতে আসা নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে ছয় মাস থেকে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় পর্যন্ত সেকেন্ডারি মার্কেটে খোলা হয় এবং একপর্যায়ে তারা শেয়ারগুলো ছেড়ে দেয়। আর তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ারটি যায় এবং তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে যে ইস্যুর কারণে শেয়ারদর বেড়েছিল, সে সময় আমরা অনেকেই এই টকশোতেই বলেছিলাম, এটি টেকসই হবে না। সেটির প্রতিফল এখন আমরা দেখতে পারছি। পুঁজিবাজারে আইসিবির কাজ হচ্ছে বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখা। কিন্তু এ কাজে আইসিবির কোনো তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তারা ব্যাংক খাতের তিন হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে সেই টাকা স্থানান্তর করেছে সরকারি কোনো এজেন্সি বা ব্যাংকে। এখন বলছে, তারা পুঁজি সংকটে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন অবস্থায় তারা পুঁজিবাজারের ভারসাম্য বজায় রাখবে কীভাবে? আর এমন যদি চলতে থাকে তাহলে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করি, যার ফলে বর্তমান বাজারের এই অবস্থাটি আমরা দেখতে পাচ্ছি।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০