শেয়ার বিজ ডেস্ক: বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার মানের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসক ও নার্সদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাইভেট সেক্টর এগিয়ে আসছে। তারা মেডিক্যাল কলেজ করছে। তবে তাদের শিক্ষার মানটা ঠিক মতো আছে কি না সেদিকে আরেকটু নজর দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন (বিএসসিসিএম) ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিংয়ের যৌথ উদ্যোগে ১০ দিনব্যাপী তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন (ক্রিটিকন-থ্রি) উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গতকাল সকালে এ অনুষ্ঠান হয়। সূত্র: বিডিনিউজ
দেশের ডাক্তারের অভাবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন ডাক্তারকে এত রোগী দেখতে হয় যে, এটা আসলে মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এসব সমস্যা সমাধানে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন এবং গত ৯ বছরে ১২ হাজার ৭২৮ জন সহকারী সার্জন এবং ১১৮ জন ডেন্টাল সার্জন, মাঠ পর্যায়ে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রায় সাড়ে ১২ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়ার হয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের ডাক্তারের অভাব রয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ২৪টি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে আট হাজার শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও কিন্তু, আমাদের শয্যার অভাব আছে।
নার্সিং সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই; আমাদের নার্সিংটাও যে একটা মর্যাদাপূর্ণ পেশা … মানে, মানবতার সেবামূলক পেশা; এ জিনিসটা যেন মানুষের মধ্যে উপলব্ধি হয়। আমাদের দেশে তো অনেক সময় নিচু চোখেই দেখা হতো। অথচ পৃথিবীতে নার্সিংটা অনেক বেশি মর্যাদা পায়।’
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ডাক্তারদের আরও উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা বিদেশে পাঠাতে চাই। আমার এটাই প্রশ্ন যদি অন্য দেশ পারে, তো আমরা পারব না কেন? কেন পিছিয়ে থাকবে আমাদের দেশ? আমাদের কি মেধার অভাব আছে? না। আমাদের কি জ্ঞানের অভাব আছে? না। আমাদের সুযোগের অভাব ছিল।’
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। আমি বললাম, আচ্ছা আপনাদের ম্যাজিকটা কি বলেন তো? রোগী আমাদের ওখানে ক্রিটিক্যাল, আর আপনাদের এখানে এলে ভালো হয়ে যায়। আপনারা কি করেন? কীভাবে ভালো করেন? আমাকে একটু জানতে দেন। আমি জানতে চাই।’
এ সময় হাসপাতালগুলোর ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে দর্শনার্থী প্রবেশের বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের আরও শক্ত হতে হবে। আইসিইউতে ঢোকাটা তো ভাত-মাছের মতো। আত্মীয়-স্বজন গিয়ে বসে থাকবে। আবার ভিজিটর যেতে হবে। আর, রাজনৈতিক নেতারা না গেলে নাকি রোগীর আত্মীয়দের ইজ্জত নষ্ট হয়ে যায়। আর, যিনি নেতা থাকেন; তারও মনে হয়, আমি না গিয়ে দায়িত্ব পালন করলাম না। এ জায়গাটায় আপনাদের কড়াকড়ি করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ভোট বাড়ল কি না, সেটা নিয়ে আমার চিন্তা না। রোগী বাঁচলো কি না সেটা নিয়ে আমার চিন্তা। রাজনৈতিক নেতারা আর রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বলব, রোগী বাঁচাতে চাইলে চিকিৎসাটা ভালোভাবে করতে দিতে হবে।
নিজে রোগী দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ক্যামেরাম্যানরা খুব নাখোশ, ছবি নিতে পারছে না। কারণ, রোগী থাকবে, রোগীর কাছে যাব। রোগীর বেডে বসব। তারপর, একটা ছবি নেবে। ওই ছবির অনেক মূল্য। কিন্তু রোগীর যে ১২টা বাজে ওটা কিন্তু দেখে না। অপারেশন থিয়েটারে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকে পড়েন। না ঢুকলেই কি হয় না?
বিএসসিসিএমের সভাপতি ইউএইচ সাহেরা খাতুনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্যসচিব সিরাজুল হক খান এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব এএসএফ আরিফ আহসান উপস্থিত ছিলেন।