জাকারিয়া পলাশ: কেনাকাটা বা যেকোনো কাজে অর্থ লেনদেনে আন্তর্জাতিক মহলে পেপালের মতো ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দেশেও একই ধরনের সেবা চালুর অনুমোদন পেয়েছে আই-পে। আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বা ফিনটেক সেবায় আসতে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) অনুমোদন পেয়েছে। ফলে আই-পে’র মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে নগদ টাকার ব্যবহার প্রয়োজন হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, আই-পে সিস্টেমস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা। ইন্টারনেট-ভিত্তিক অর্থ লেনদেনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে দেশের সব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রেডিসন হোটেলে এর উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
প্রচলিত বিকাশ বা রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) চেয়ে আই-পে ব্যতিক্রম। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান আবুল খায়ের চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আই-পে হচ্ছে সম্পূর্ণ ক্যাশলেস। গ্রাহককে ই-ওয়ালেটে ব্যালেন্স লোড করার জন্য অবশ্যই স্বীকৃত কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট অথবা ক্রেডিট/ডেবিড কার্ড থাকতে হবে। আবার ই-ওয়ালেট থেকে অর্থ ট্রান্সফার করার জন্যও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার করতে হবে। ক্যাশ বা নগদ টাকার কোনো ব্যবহার এখানে নেই, যা বিকাশ কিংবা রকেটে আছে। এজেন্টের কাছ থেকে বিকাশে বা রকেটে ক্যাশ-আউট করা যায়।’
ক্যাশের ব্যবহার না থাকায় এবং সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এ ব্যবস্থায় পূর্ণ নিরাপত্তা থাকছে বলে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পেপাল বা ভারতীয় অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পে-টাইমের মতোই এটি কাজ করবে। আজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। তবে এর আগেই আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি।’
প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা জানান, যেকোনো কম্পিউটার ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকলেই আই-পের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে। স্মার্টফোনে আই-পে অ্যাপস ডাউনলোড করেও লেনদেন করা যাবে। এরই মধ্যে দেশের চার লাখ লোক আই-পে অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, কেনাকাটার অর্থ পরিশোধ, অন্য অ্যাকাউন্টধারীর কাছ থেকে অর্থ ধার নেওয়া এবং মোবাইলের টকটাইম কেনা যাবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে, একটি ই-ওয়ালেট চালুর জন্য গ্রাহককে অ্যাপস ডাউনলেডের পর চার ধাপে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। প্রথম ধাপে প্রফাইল, নাম ও মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। পরিচয়পত্রের কপি, ঠিকানা ও নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিলেই অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাই হবে। আর ভেরিফাই না হলে কোনো গ্রাহক লেনদেন করতে পারবেন না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবস্থাটি সম্পর্কে এর সার্ভিস টিম থেকে জানানো হয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ই-ওয়ালেটে লোড (জমা) করে রাখতে হবে। সেখান থেকেই কেনাকাটা করা, পরিসেবার বিল পরিশোধ, ট্যাক্স, ট্রান্সপোর্ট ও টিউশন ফি পরিশোধ করা যাবে। একজন গ্রাহক একদিনে সর্বাধিক ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন এ ব্যবস্থার মাধ্যমে। আর এক মাসে তার মোট ব্যায়ের সীমা থাকবে দুই লাখ টাকা। ব্যাক্তিগত ই-ওয়ালেটে একজন সর্বাধিক চার লাখ টাকা জমা রাখতে পারবেন। তবে বাণিজ্যিক ই-ওয়ালেটে অর্থ জমা রাখার কোনো সীমা রাখা হয়নি। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কয়েকজন অপারেটর নিযুক্ত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে থেকেই আই-পে নামে এ অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের প্রচারণা শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে বইয়ের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এ সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেশের মাওলা ব্রাদার্স, পাঠক সমাবেশ, ইত্যাদি, সময়, তাম্রলিপি, ইউপিএলসহ অনেকেই এ প্রক্রিয়ায় বই বিক্রির পেমেন্ট গ্রহণে আগ্রহী। এছাড়া এজি ফুড, বিন্নি রেস্তোরাঁ, কিভা হানসহ কয়েকটি কফিশপ ও রেস্তোরাঁও আই-পেতে যুক্ত হয়েছে।