উৎপাদনে নেই তবুও দাপট পাঁচ কোম্পানির শেয়ারের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবসার ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারদের ভাগ্য। ব্যবসা ভালো থাকলে ভালো রিটার্ন পান বিনিয়োগকারীরা। পক্ষান্তরে ব্যবসা ভালো না থাকলে রিটার্নের আশা থাকে না। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কোনো ব্যবসা নেই। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে এসব কোম্পানির উৎপাদন। এর পরও বেশিরভাগ সময় এসব কোম্পানি দর বৃদ্ধির দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। এসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহেরও কমতি নেই।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, উৎপাদনে না থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ার, বিচ হ্যাচারি লিমিটেড, কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, মডার্ন ডায়িং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং ও রহিমা ফুড করপোরেশন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে বিচ হ্যাচারির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল এ বিষয়ে ডিএসইর ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করা হয়। আর এ অবস্থা এখনও চলমান। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া এলাকায় ৯ দশমিক দুই একর জমির ওপর কোম্পানির হ্যাচারি। কোম্পানিটি চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও বিপণন করে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিচ হ্যাচারির কোম্পানি সচিব নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, রিজার্ভ ট্যাংকার বন্ধ থাকায় বর্তমানে আমাদের কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন কবে নাগাদ চালু হবে তা নিশ্চিত নয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর এ শেয়ারের দর ৯ টাকায় নেমে আসে, যা একসময় ২৩ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়। বর্তমানে বাজার নি¤œমুখী হওয়ায় এর শেয়ারের দর ১৬ টাকায় নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে আর্থিক অবস্থানুয়ায়ী এ শেয়ারের বর্তমান দরও অতিমূল্যায়িত।

এদিকে দীর্ঘদিন থেকে উৎপাদনে নেই তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। কোম্পানিটি প্লেসমেন্ট ও বন্ড ইস্যু করে ৬২৪ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে।

জানা গেছে, এ অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধ করবে। প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত দরের প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি। উৎপাদন বন্ধের পর এ শেয়ার কেনাবেচা হয় চার টাকা থেকে ৪০ পয়সার মধ্যে, বর্তমানে যা লেনদেন হচ্ছে চার টাকা ৯০ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা ২০ পয়সার মধ্যে।

একইভাবে বস্ত্র খাতের মডার্ন ডায়িংয়ের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে দুই বছরের বেশি। বর্তমানে কারখানা ভাড়া দিয়ে চলছে এ কোম্পানিটি। যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির একজন ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। উৎপাদন থেমে গেলে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ৮০ টাকায় নেমে আসে, বর্তমানে যা ২৩৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। অন্য প্রতিষ্ঠান কে অ্যান্ড কিউর উৎপাদনও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে এ শেয়ার ১৭ টাকায় নেমে আসে, বর্তমানে যা লেনদেন হচ্ছে ১৪৩ টাকায়।

অন্যদিকে মূলধনের সংকটের কারণে ২০১৩ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রহিমা ফুড করপোরেশন। ব্যাংক দেনা পরিশোধ করতে না পারায় অবশেষে কোম্পানিটির মালিকানায় পরিবর্তন আসছেÑবহুদিন থেকে পুঁজিবাজারে এমন গুজব ঘুরপাক খাচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে রহিমা ফুড করপোরেশনের কারখানা অধিগ্রহণে প্রতিযোগিতায় নেমেছে দুটি গ্রুপ। একসময় এ শেয়ারের দর ছিল ৩৬ টাকা। বর্তমানে এ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১৪২ টাকায়।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানির এ অবস্থার জন্য শুধু কোম্পানিই দায়ী নয়, কোম্পানিগুলো বাজারে আনার ক্ষেত্রে যারা জড়িত ছিল তারা সবাই দায়ী। তাদের কেউই দায়ভার এড়াতে পারেন না।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দুর্বল কোম্পানি বাজারে এলে একসময় তারা বিনিয়োগকারীদের কিছু দিতে পারে না। সেজন্য কোম্পানির অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসিকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের সব সময় ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করতে হবে। কোম্পানি যখন ভালো মুনাফা করে তখন কেউ অভিযোগ করে না; কিন্তু কোম্পানি যখন লোকসানে চলে যায়, তখনই সবাই কথা বলা শুরু করে। একটি কোম্পানি যখন বাজারে আসে তখন কেউ বলতে পারে না ভবিষ্যতে কী হবে।

এদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থেকে দূরে থাকা উত্তম মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। কারণ এসব কোম্পানি থেকে কালেভদ্রে লোভনীয় মুনাফা পাওয়া গেলেও এখানে ঝুঁকিই বেশি।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবের প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের আগে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিয়ে তারপর বিনিয়োগ করা উচিত, কারণ একবার সিদ্ধান্ত ভুল হলে বিনিয়োগকারীকেই তার খেসারত দিতে হয়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০