সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ২ মার্চ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক মিলনমেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণে আয়োজনটি ছিল মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয়। সবুজ ক্যাম্পাসটি সেদিন সেজেছিল নতুনের বার্তা নিয়ে। দীর্ঘকাল পর পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে সবাই সেই স্বপ্নিল স্মৃতি আড্ডায় মেতে ওঠেন।
বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অ্যালামনাই সম্মিলনের উপদেষ্টা ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানু।
আনন্দের এ মহোৎসবে প্রাণঢালা আন্তরিকতায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মাঠ খুশিতে মুখর হয়ে ওঠে। রাত ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ মিলনমেলা উপভোগ্য হয়ে ওঠে সবার পদচারণায়। প্রায় সবাই সময় কাটান ফেলে আসা শিক্ষাজীবনের স্মৃতি মন্থনে। শুধু তা-ই নয়, বন্ধুদের নিয়ে অনেককেই আনন্দে অভিভূত হতে দেখা যায়। ভিন্ন বিভাগের অন্য বন্ধুদেরও চিনে নিতে সময় লাগেনি। মধ্যাহ্নভোজে আসে এক অনাবিল মুগ্ধতা; এর সঙ্গে স্মৃতি হাতড়ানো তো আছেই।
দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সাবেক বিচারপতি আবদুর রউফ, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন, কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মনসুর মুসা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফ-উল-করিম খান, ভৌত ও গাণিতিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাসিন অনুপমা আজহারী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান এবং অ্যালামনাই সম্মিলনের সদস্য সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী। বক্তারা বলেন, গণবিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের লক্ষ্যে আজকের এ আয়োজন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হবে। সে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাগত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
অ্যালামনাইদের উদ্দেশে অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানু।
দুপুরের পর সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণসহ নির্বাচনের মাধ্যমে ২৫ সদস্যের গণবিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে ১৪ বিভাগের বিভাগীয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কমিটি গঠন করা হয়।
বিভাগীয় কমিটির সদস্যরা এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
আইন বিভাগ প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতাউল মাহমুদ খান বাবু বলেন, প্রাক্তনদের কাছে পাব বলেই ছুটে আসা। প্রিয় বিভাগের প্রিয় ভাইবোনদের কাছে পেয়ে আজ অনেকটা উচ্ছ্বসিত। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
হাজারো শিক্ষার্থীর পদভার ও ব্যাপক উচ্ছ্বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে সেদিন। সব শিক্ষার্থীর কাছে ক্যাম্পাসের মূল আকর্ষণ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দ্বার। ছায়া সুনিবিড় শান্তিময় সবুজ পরিবেশে ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য, হৈ চৈ,
নাচ-গান ও ছাত্রদের মিলনমেলার ভেতর দিয়ে দিনটি কাটে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। সন্ধ্যায়
লাল-সবুজ বাতি দিয়ে সাজানো হয় পুরো ক্যাম্পাস। প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের সব ভবনে লেগেছে আলোর ছোঁয়া। আলোকসজ্জায় রাতের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন লাভ করে অন্য এক রূপ।
সবচেয়ে লক্ষণীয় ও আনন্দের বার্তাটি হলোÑস্বাধীনতার মাসে শুধু বাংলা গান উপস্থিত দর্শনার্থী ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিল এক অনন্য উপহার। সন্ধ্যায় বিশিষ্ট শিল্পী আঁখি আলমগীরসহ সেরাকণ্ঠের শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
মুন্নি আক্তার, গণবিশ্ববিদ্যালয়