সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার পারিবারিক মালিকানাধীন হামিদা দোজা লিমিটেড এবং ইনসাম এসেনশিয়াল ট্রেড লিমিটেডের নামের নেওয়া মোট ৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেডের। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুদাসলে চলতি বছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত এ পাওনা দাঁড়ায়। আর পাওনা আদায়ে বন্ধকীতে থাকা চার একর জমি নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি, যা আগামী ২৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে উš§ুক্ত নিলামে বিক্রয় হবে।
ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের সূত্রে, জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মাহজাবিন মোরশেদের স্বামী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার পরিবারের মালিকানাধীন ক্রিস্টাল গ্রুপ। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হামিদা দোজা লিমিটেড এবং ইনসাম এসেনশিয়াল ট্রেড লিমিটেড বাণিজ্য সহায়কের জন্য ঋণ দেয়। কিন্তু গত এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো হতে কোনো কিস্তির টাকা পায়নি। এ নিয়ে পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মিলেনি। এতে ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সুদাসলে চলতি বছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত পাওনা দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে হামিদা দোজা লিমিটেডের কাছে ২৬ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৭২৯ টাকা ও ইনসাম এসেনশিয়াল ট্রেড লিমিটেডের কাছে ১৪ কোটি ৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৩ টাকা। এসব পাওনা আদায়ে বন্ধকীতে থাকা চট্টগ্রামে হাটহাজারি জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলীর চার একর জমি নিলামে বিক্রয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি, যা আগামী ২৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে উš§ুক্ত নিলামে বিক্রি হবে।
ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা ব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যবসার প্রয়োজনে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও ধারাবাহিকভাবে পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার পরিবারের মালিকানাধীন হামিদা দোজা লিমিটেড এবং ইনসাম এসেনশিয়াল ট্রেড লিমিটেড এখন আমাদের ঋণখেলাপি গ্রাহক। নিয়ম অনুসারে যেসব প্রক্রিয়া পালন করার তা শুরু করেছি।
তথ্যমতে, ক্রিস্টাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে আছে ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকার্স লিমিটেড, আইজি নেভিগেশন লিমিটেড, ক্রিস্টাল নেভিগেশন লিমিটেড, বে নেভেগেশন লিমিটেড, আইজি নেভিগেশন লিমিটেড, ক্রিস্টাল ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড, ইব্রাহিম ফার্মস লিমিটেড, ম্যাক ট্রেড লিমিটেড, ক্রিস্টাল ফিশারিজ লিমিটেড, এমআরএফ ফিশারিজ, ফারুক অ্যান্ড সন্স লিমিটেড হামিদা দোজা লিমিটেড এবং ইনসাম এসেনশিয়াল ট্রেড লিমিটেড প্রভৃতি।
গ্রুপটি বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসা, মাছ ধরার ট্রলার, প্লাস্ট্রিক পণ্যের রিসাইক্লিং, ট্রেডিং ব্যবসা, জাহাজ ভাঙার শিপইয়ার্ড ব্যবসার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নেয়। গত কয়েক বছরের গ্রুপটির ধারাবাহিক লোকসান ও অদক্ষতায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি পাওনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় আছে এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংকে আছে ১১৩ কোটি ৮৩ লাখ কোটি টাকাও খেলাপি হয়ে পড়ে। আর এসব পাওনা আদায়ে বন্ধকীতে থাকা ১১১৪ শতাংশ জমিসহ স্থাপনা নিলামে বিক্রয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যাংক। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংকের আছে গ্রুপটির একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের তালিকায় আছে আইজি নেভিগেশন লিমিটেডের নামে ১৪১ কোটি টাকা ঋণ, ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকার্স নামে ১৩৪ কোটি ৯৩ লাখ, বে নেভিগেশনের ১২০ কোটি, এমআরএফ ট্রেড হাউজের নামে ৬২ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রুপ পরিচালক ফয়সাল মোরশেদ ইব্রাহিমের ফারুক অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের কাছে প্রাইম ব্যাংকের আছে ২২ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের পাঁচ কোটি টাকা। এসব অনাদায় ঋণ আদায় নিয়ে বিপাকে আছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
খেলাপি ঋণের ব্যাপারে মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা যায় তিনি নিয়মিত অফিসে বসেন না। ফলে সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ যে, ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের গত ২০১৬ সালে শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছির ৮১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা আগের বছরের ছিল ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করে ছয় কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এটি আগের বছরের ছিল ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।