মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন থেকে দরপতন চলছে। কিছুতেই থামছে না অবিরাম এ পতন। প্রতিদিনই পোর্টফোলিও থেকে পুঁজি উধাও হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। নতুন বছরে ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৬৬৪ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব খাতের শেয়ারের একযোগে দরপতন হয়ে এখন বাজার পরিস্থিতি নাজুক। তবে এ পরিস্থিতি থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবেÑএমন প্রত্যাশা সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার।
তাদের অভিমত, শেয়ারের দর কমার পাশাপাশি মার্কেট পিই রেশিও বা শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত এমন স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এখান থেকে আর কমার শঙ্কা নেই। বরং এখান থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় শেয়ারপ্রতি মূল্য আয় অনুপাত ১৫ দশমিক ৮৮। এক সপ্তাহ আগেও যার পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ২৭ পয়েন্ট।
বর্তমানে খাতভিত্তিক পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে আট দশমিক চার পয়েন্টে, ব্যাকরণগতভাবে যা বিনিয়োগের সবুজ সংকেত বহন করে। কারণ ২০-এর নিচে পিই থাকলে সে কোম্পানিকে বিনিয়োগের উপযোগী ভাবা হয়।
এমনিভাবে বিনিয়োগের উপযোগী রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এ খাতের বর্তমান পিই রেশিও ১১ দশমিক সাত পয়েন্ট। আর সাধারণ বিমা খাতের পিই ১১ দশমিক তিন পয়েন্ট। এছাড়া সিমেন্ট খাতের পিই রেশিও ৩৯ দশমিক চার পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ১৯ দশমিক পাঁচ, প্রকৌশল খাতের ২০ দশমিক এক, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২৯ দশমিক ছয় এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের পিই ২১ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে। এছাড়া অন্যান্য খাতের পিইও রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি ইস্যুতে বাজারের পতন হয়। এর মধ্যে রাজনৈতিক, কৌশলগত বিনিয়োগকারীসহ আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে এসব ইস্যুতে বাজার পতন হতে পারে বলে মনে করি না। বাজার পতনের সব কারণ হচ্ছে মনোগত। পেনিক সেল বেড়ে যাওয়ায় এ পতন হয়েছে। তবে এখন যে পরিস্থিতি, তাতে অচিরেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নতুন বছরে শুরু থেকে শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৬৬৪ পয়েন্ট। গত বছরের শেষ দিনে ডিএসইর সূচক ছিল ছয় হাজার ২৪৪ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার যা স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৮০ পয়েন্টে। এ সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে টানা পতন লক্ষ করা গেছে। মাঝেমধ্যে দু-একদিন বাজার ভালো থাকলেও তা স্থায়ী হয়নি।
এ সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে বাজার মূলধনও। গত বছরের শেষদিন ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ২২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ যা স্থির হয়েছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবি) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, বাংলাদেশ যদি এক্সপোজারের হিসাব মার্কেট প্রাইজে হিসাব না করে ক্রয়মূল্যে হিসাব করে, তাহলে পুঁজিবাজারের পতন থামবে। তিনি বলেন, এক্সপোজারের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসছে না। এ সমস্যার সমাধান হলে তারা বাজারে আসবে। আশা করি তখন ইতিবাচক হবে বাজার।
একই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে এখন অধিকাংশ শেয়ারই ক্রয়যোগ্য। তারপর বাজারের পতন একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এখান থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাজার পতনের কয়েকটি কারণ থাকলেও মূল কারণ বিনিয়োগকারীদের ভীতি। ভয় না পেয়ে তাদের ভালো শেয়ারের সঙ্গে থেকে অপেক্ষা করা উচিত। তাহলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, তাদের পুঁজিও নিরাপদে থাকবে।