উৎপাদন খরচ না ওঠায় হতাশ রংপুর ও মুন্সীগঞ্জের আলুচাষি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: গত বছরের হাজার হাজার বস্তা আলু এখনও পড়ে আছে হিমাগারে। এদিকে পুরো দমে চলছে ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন। এবারও আলুর দাম নেই, এমনকি উঠছে না উৎপাদন খরচ। তাই হতাশ হয়ে পড়েছেন আলুচাষি। তারা আলু রফতানি করার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। রংপুর প্রতিনিধি নুর আলম ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ রতনের তৈরি করা প্রতিবেদন:

রংপুর : গত বছরের মতো এ বছরও আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না রংপুর অঞ্চলের প্রায় আড়াই লাখ আলুচাষি। গত বছরের হাজার হাজার বস্তা আলু এখনও পড়ে আছে হিমাগারে। এবারও লাভ তো দূরের কথা প্রতি শতাংশে ৪০০-৪৫০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় আলু রফতানিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে আলু চাষ হয়েছে ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ২৭৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় আট হাজার ৮৭ হেক্টর, কুড়িগ্রামে সাত হাজার ২৯১ হেক্টর, লালমনিরহাটে পাঁচ হাজার ৩৮৫ হেক্টর, নীলফামারীতে ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে আলুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০ লাখ ৬৯ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন। এবারের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

আলুচাষিরা জানান, আলু চাষে প্রতি ২৪ শতাংশ জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, সেচসহ উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ২৮ হাজার টাকা। এতে আলু উৎপাদন হয় প্রায় ৩০ বস্তা। বর্তমানে প্রতি ১০০ কেজির আলুর বস্তা জমিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। এ হিসাবে কৃষক প্রতি ২৪ শতাংশে লোকসান গুণছেন ১০ হাজার টাকার বেশি। এ আলু হিমাগারে রাখতে হলে তাদের আরও বস্তাপ্রতি গুণতে হয় ৩০০ টাকা। বছর শেষে দাম একই রকম থাকলে হিমাগারে রেখে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে। তাই এ অঞ্চলের কৃষক সরকারের কাছে আলু রফতানির আবেদন জানান।

রংপুরের মাহিগঞ্জ শরেয়ারতল এলাকার আলু চাষি বেলাল হোসেন জানান, গত বছর ৯০ একর জমিতে আলু চাষ করে তার লোকসান হয়েছে ৩০ লাখ টাকার বেশি। গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবারও তিনি ১০০ একরের বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্তু বাজারে এবারও দাম না থাকায় লাভ তো দূরের কথা খরচ উঠবে কি নাÑএমন আশঙ্কায় আছেন তিনি। একই কথা জানান মাহিগঞ্জ বকশি এলাকার আলু চাষি মন্তাজ আলী। তিনি বলেন, জমিতে লেট ব্রাইট রোগ দেখা দেওয়ায় ছত্রাক নাশক ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ দেওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। গত বছরের আলু এখনও অবিক্রিত পড়ে আছে। এর ওপর বাজারে নেই দাম। ফলে তাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকার যদি আলু রফতানির ব্যবস্থা করে তাহলে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন তারা।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান মনির জানান, এ অঞ্চলে (রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায়) প্রায় আড়াই লাখ কৃষক আলু চাষের সঙ্গে জড়িত। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. বদরুজ্জামান জানান, বিদেশে আলু রফতানিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে এ অঞ্চলে আলু চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, আমাদের দেশে আলুর উৎপাদন খরচ অন্য দেশের তুলনায় বেশি। এদিকে নানা সমস্যায় রাশিয়া আলু কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। কৃষককে বাঁচাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ভর্তুকি দিতে হবে।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। বর্তমানে জেলায় চলছে আলু উত্তোলন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই আলুর ন্যায্য দাম দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন চাষি।

জেলার ছয় উপজেলায় ৭১টি কোল্ডস্টোরেজ (হিমাগার) রয়েছে। আর এসব হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ১৩ লাখ ৫১ হাজার ১২৯ টন আলু উৎপাদন হয়েছিল এবং এর মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দাম না থাকায় কৃষক কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু উত্তোলন করেননি। এ বছর জেলায় ৩৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়, অথচ গত বছর আলু রোপণ করা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে।

সদরের টরকি গ্রামের কৃষক মনি মিজি ও মুকুল মৃধা জানান, এ বছর ফলনও কম, দামও নেই। পাইকাররা জমিতেই আসছে না। বীজ আলু কেনা, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতি মণ আলুতে তাদের খরচ পড়েছে সাড়ে ৩০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ আলু বিক্রি হচ্ছে একই দামে। এ বছর কোল্ড স্টোরেজগুলো ৫০ কেজির প্রতি আলুর ভাড়া নির্ধারণ করেছে ২০০ টাকা। গত বছর ৮০ কেজির বস্তা প্রতি ভাড়া নেয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ফলে অনেকেই জমিতে আলু স্তূপ করে রেখেছেন। এ অবস্থায় আলুচাষিরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং বিদেশে আলু রফতানির দাবি তুলেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর জানান, এ বছর আলুর ফলন কম এবং দামও নেই। আলু উত্তোলনের পর স্থানীয় পদ্ধতিতে বাড়িতে রেখে তিন-চার মাস পর আলু বিক্রি করলে দাম কিছুটা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০