শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, শেরপুর: নিয়ন্ত্রণহীন শুল্কমুক্ত চাল আমদানি হওয়ায় দেশীয় চালকল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে দাবি করেছেন শেরপুর চালকল মালিক সমিতির নেতারা। গতকাল বুধবার শহরের বটতলা এলাকায় জেলা চালকল মালিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। সেসঙ্গে এ খাতকে ভয়ংকর বিপর্যয় থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রওশন লিখিত বক্তব্যে জানান, মৌসুমের শুরুতে ধানের মূল্য বেশি থাকায় চালের মূল্যও বৃদ্ধি পায়। সে অবস্থায় আমদানি করা চালের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করায় বাজার স্থিতিশীল হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যাপক চাল আমদানি করায় দেশীয় চালকলে উৎপাদিত চাল বিক্রি প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে অসম প্রতিযোগিতা ও ক্রমাগত লোকসানের ফলে জেলার বেশিরভাগ চালকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
শেরপুরের চাতাল খাতের সঙ্গে লক্ষাধিক পরিবার নানাভাবে জড়িয়ে আছে। নিয়ন্ত্রণহীন ও শুল্কমুক্ত আমদানি করা চালের কারণে অন্তহীন দুর্ভোগে আছে পরিবারগুলো এবং চাল বিক্রি করে লোকসান গুনতে গুনতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে করতে জেলার বেশিরভাগ চালকল মালিক পুঁজিহারা হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অনেকে আবার হয়েছেন ঋণখেলাপি।
সংম্মেলনে আরও বলা হয়, সম্প্রতি কতিপয় খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দোষ দিয়ে নাজিরশাইল চাল কেজিপ্রতি ছয় থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। ফলে সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে চাল আমদানি করছে। কিন্তু এ প্রভাব পড়েছে জেলার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের ওপর। কারণ এর আগে দেশের পূর্ব-উত্তরাঞ্চলে হঠাৎ বন্যায় ধানের ফলন বিপর্যয় হয়। সে সময় চালকল মালিকরা কৃষকের কাছ থেকে অধিক মূল্যে ধান কিনেছেন। কিন্তু ওই চালের উৎপাদন খরচ বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা চালের দামের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় চালকল মালিকদের ব্যবসায় ধস নেমেছে।
সংবাদ সম্মেলনে চালকল মালিকরা দাবি করেন, বর্তমানে দেশি চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এদিকে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করায় এ চাল কেউ কিনছে না।
বর্তমানে নাজিরশাইল চালের কেজিপ্রতি পাইকারি মূল্য ৪২ টাকা, কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেরাই সিন্ডিকেট করে চালের মূল্য বৃদ্ধি করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। তাই সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের দাবি, চাল আমদানিতে শুল্কারোপ করাসহ জরুরিভাবে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে আগামী মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে পারবেন না কোনো চালকল মালিক।
তাই দেশীয় চালকল খাতকে বাঁচাতে আমদানির ওপর প্রত্যাহার করা সব শুল্ক আবার আরোপের দাবি জানান তারা।
এ সময় জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম তালুকদার, শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, মিল মালিক হায়দার আলী, দুলাল মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জেলায় ২৫টি অটোমেটিক, ৫০টি সেমি অটোমেটিক এবং ছয় শতাধিক হাসকিং মিল রয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক।
শুল্কমুক্ত চাল আমদানি বন্ধের দাবি শেরপুর মালিক সমিতির
