হামিদুর রহমান: নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিমান দুর্ঘটনার পর প্রথম এক সপ্তাহ টিকিট বিক্রি পিছিয়ে থাকলেও ক্ষত কাটিয়ে উঠছে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি ঈদ আসতে আড়াই মাস বাকি থাকলেও গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, সবচেয়ে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে আকাশপথ। তবে দুর্ঘটনা যে কোনো সময় ঘটতে পারে, সেজন্য সবার সতর্ক থাকতে হবে। নেপালে ইউএস-বাংলার দুর্ঘটনার পর মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রথম এক সপ্তাহ টিকিট বিক্রি কম ছিল। অর্থাৎ ওই সময়ে অনেক ভ্রমণপিপাসুর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, যে কারণে টিকিট বিক্রি একটু কমে যায়। তবে যারা ব্যবসায়ী বা প্রবাসী তাদের ক্ষেত্রে টিকিট বিক্রিতে ঘাটতি হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আমাদের দেশে যারা উড়োজাহাজে যাওয়া-আসা করেন তাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী বা প্রবাসী। অর্থাৎ সময় মেইনটেইন করার জন্য ব্যবসায়ী বা প্রবাসীকে উড়োজাহাজে উঠতে হয়। তবে বর্তমানে কোম্পানিগুলো আগের অবস্থানে ফিরছে। ঈদ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। ডোমেস্টিকের কোম্পানিগুলোর প্রায় অর্ধেক টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
রোজার মাসে ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করতে গ্রাহকরা অনেক আগে থেকেই বুকিং করে রাখছেন। ঈদের আগে অনেক সময় টিকিট সংকট থাকে। যে কারণে অনেক গ্রাহক অনিশ্চয়তায় না থেকে আগেই বুকিং সংগ্রহ করছেন বলে জানা যায়।
নয়ো-এয়ারের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার একেএম মাহফুজুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে। মূলত লং টাইম হাতে রেখে কিনলে সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট পাওয়া যায়। তাছাড়া যে কোনো সময় টিকিটের মূল্য ছেড়ে যায়। এছাড়া রোজার মাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষ বাইরে বের হতে চান না, যে কারণে অনেক গ্রাহক এখন অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঈদ উপলক্ষে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে নভো-এয়ারের প্রায় ৪০ শতাংশ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রায় ৬০ শতাংশ ও ইউএস-বাংলার বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
ইউএস বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশালে চাপ বেশি থাকে। এই এলাকাগুলোর টিকিট তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। চট্টগ্রামে সব এয়ারলাইনের অনেক ফ্লাইট থাকে, যে কারণে চট্টগ্রামে দাম তুলনামূলকভাবে একটু কম থাকে, তবে ঈদের পরে চট্টগ্রামে চাপ অনেক বেশি থাকে। এ পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষে অনেক টিকিট সেল হয়ে গেছে। প্রতিদিন সেল বাড়ছে।’
উড়োজাহাজের পাশাপাশি হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা বিপুল হারে বাড়ছে। ঢাকার বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার সার্ভিসের সঙ্গে কথা জানা যায়, এবার বুকিং সন্তোষজনক। যাত্রীর চাপ রয়েছে। স্কয়ার হেলিকপ্টার সার্ভিসের ম্যানেজার (অপারেশন্স) শেখ আসাদ বলেন, ‘হেলিকপ্টার ভাড়া ঘণ্টায় আগের চেয়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। যে কারণে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। হেলিকপ্টারগুলো মূলত করপোরেট ক্লায়েন্টনির্ভর। সারা বছর নির্ধারিত প্রচুর ক্লায়েন্ট থাকে। তবে ঈদের আগে ও পরে হেলিপ্টারের প্রচুর চাপ থাকে।
এদিকে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় শেষ দিনে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। দেশ-বিদেশের ৪৮টি প্রতিষ্ঠান পাঁচটি প্যাভিলিয়ন ও ৬০টি বুথে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। তিন দিনে ১৫ হাজারের অধিক দর্শনার্থী মেলায় আসেন। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যে তিন কোটি টাকার অধিক এয়ার টিকিট বিক্রি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভোএয়ার। দেশীয় এই বিমান সংস্থাগুলো দর্শনার্থীদের জন্য ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় অফার করে। এছাড়া শীর্ষস্থানীয় ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটরাও বিভিন্ন গন্তব্যের এয়ারটিকিট বিক্রি করেন।
দেড় কোটি টাকার অধিক মূল্যের ট্যুর প্যাকেজ, হোটেল, রিসোর্টসহ বিভিন্ন ভ্রমণসংক্রান্ত পণ্য ও সেবার অর্ডার লাভ করে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য দর্শনার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি সংঘটিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সত্ত্বেও অনেককেই নেপাল ভ্রমণের জন্য এয়ারটিকিট ও ট্যুর প্যাকেজ কিনতে দেখা যায়।