নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য প্রকাশ বন্ধের উদ্দেশ্যে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য দাবি করে এ প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ ধরনের প্রস্তাবনা মেনে নেওয়া হলে তা এ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের সুরক্ষা দেবে বলে মনে করছে টিআইবি।
এই প্রস্তাবকে পশ্চাদমুখী ও নিবর্তনমূলক আখ্যা দিয়ে টিআইবি জানায়, এ প্রস্তাব পাস হলে অধিকতর দুর্নীতির বিস্তার ঘটাবে। তাই এ প্রস্তাব নির্দ্বিধায় প্রত্যাখ্যান করার জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিএবি’র মতে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট নেতিবাচক সংবাদ গ্রাহক আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে; এজন্য এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ থেকে সংবাদমাধ্যমকে বিরত রাখার জন্য ব্যাংক রিপোর্টিং অ্যাক্ট করার সুপারিশ করেছে বিএবি। এ প্রস্তাবটি শুধু উটপাখি সমআচরণের বহিঃপ্রকাশই নয়, এটি ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতির তথ্য গোপন রেখে এসবের সুরক্ষা দেওয়া ও আরও বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির অপপ্রয়াস।’
তিনি বলেন, ‘কোনো অবস্থায়ই এ ধরনের জনস্বার্থবিরোধী প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বেসরকারি হলেও ব্যাংক খাত বাস্তবে জনগণের অর্থের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ খাতের ইতিবাচক সংবাদের পাশাপাশি দুর্নীতি, অনিয়মসহ সব প্রকার তথ্য জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। তথ্য প্রকাশে প্রতিরোধক তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তার করার কোনো অধিকার জনগণ ব্যাংক খাতকে দেয়নি।’
ব্যাংক রিপোর্টিং অ্যাক্টের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, তবে তা দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির তথ্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য নয়। বরং এ ধরনের তথ্য যেন অবাধে প্রকাশিত হতে পারে, তার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য।
স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বা চাপে যেনতেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইতোমধ্যে ব্যাপক সংকটে জর্জরিত ব্যাংক খাতকে সমূলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত না করার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক খাতে চলমান সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে নিরপেক্ষ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে সব অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছে টিআইবি।
প্রসঙ্গত, ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য প্রকাশ বন্ধে বিএবির প্রস্তাব সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতীয় বিজনেস দৈনিক শেয়ার বিজসহ দু-একটি গণমাধ্যম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক কেলেঙ্কারির সংবাদ বন্ধে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সম্প্রতি সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠিও দেওয়া হয় অর্থমন্ত্রীকে। এতে ব্যাংকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সংবাদ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বিএবির চেয়ারম্যান (এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান) নজরুল ইসমাল মজুমদার স্বাক্ষরিত চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন অ্যাক্টের আওতায় একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ করা হবে।