পোশাককে বেশি সুবিধা দেওয়ায় অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত

মাসুম বিল্লাহ: তৈরি পোশাক খাতকে বেশি সুবিধা দেওয়ায় অন্যান্য রফতানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিকারকদের সংগঠন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফএফএমইএবি)। আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপলক্ষে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে সংগঠনটি এমনটি জানিয়েছে।

এনবিআরে পাঠানো এফএফএমইএবির ওই চিঠিতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রফতানিমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, যা নির্ভর করছে একাধিক উৎপাদনশীল খাতের দ্রুত বিকাশ ও বিপুল শোভন কর্মসংস্থানের ওপর। তাই সরকার রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত সেই ফল অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে একটিমাত্র খাতের ওপর আমাদের নির্ভরতা বরং আরও বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক। এমন নির্ভরতার জন্য অভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে সৃষ্ট যেকোনো অনিশ্চয়তা বা ধাক্কা আমাদের বড় ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

চিঠিতে বলা হয়, প্রায় সব ধরনের নীতিগত সহায়তা, প্রণোদনা ও শুল্ক রেয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে কেবল পোশাক খাতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, যা উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোর বিকাশকে রুদ্ধ করছে, বিদ্যমান অসমতা ব্যবসা পরিচালনাকে তুলনামূলকভাবে কঠিন করে তুলছে এবং অনেক ক্ষেত্রে হতাশার জন্ম দিচ্ছে।

তবে তাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সুবিধার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু পোশাক খাত বেশি সুবিধা পাচ্ছে বলেই যে চামড়া খাত বঞ্চিত হচ্ছে এমনটি বলার অবকাশ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক খাতের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মূর্শেদী শেয়ার বিজকে বলেন, এটি খুবই হালকা একটি অভিযোগ। পোশাক খাতের সঙ্গে চামড়া খাতের বিষয়টি গুলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, চামড়া একটি সম্ভাবনাময় খাত। তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই তাদের উচিতÑকোন খাত কী সুবিধা পেল, সেটা বিবেচনা না করে তাদের কী দরকার সে বিষয়গুলো সরকারের কাছে উপস্থাপন করা।

চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী, জাতীয় রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বহুমুখীকৃত পণ্য থেকে আসতে হবে ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্য থেকেই ১০ শতাংশ রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এটা অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব। চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প খাত থেকে সরকার ঘোষিত রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জন এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হলে প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক-অশুল্ক বাধা এবং অন্যান্য রফতানিমুখী শিল্প খাতের সঙ্গে বিদ্যমান অসামঞ্জস্য দূর করা প্রয়োজন, যেমনÑবর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প খাতকে যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্য শিল্প খাতকে অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সরকারি নীতি বাস্তবায়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে রাজস্ব বিভাগের এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রয়েছে, যাতে সব রফতানিমুখী খাতের জন্য একই ধরনের নীতি সহায়তা এবং সুযোগ-সুবিধা বজায় থাকে। অন্যথায় ২০২১ সালের মধ্যে এ শিল্প খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় এবং এক লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হবে না বলে তারা দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চামড়া একটি সম্ভাবনাময় খাত। রফতানি বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে এ খাতের রফতানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যার হাউজসহ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ছাড় ও প্রণোদনা দেওয়া উচিত। তবে সেটা পোশাক খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে করা সম্ভব নয়, কারণ দুটি খাতের ধরন ভিন্ন। একটির সঙ্গে অন্যটিকে মিলিয়ে ফেলার সুযোগ নেই।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০