নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে চলমান আন্দোলন স্থগিত করানো হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ৭ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধির বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তরুণরা কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছেন। তারা আমাদের রাজনীতির অপরিহার্য অংশ, তারাই নতুন প্রজš§। আমরা এ পরবর্তী প্রজšে§র জন্যই রাজনীতি করি। তাই শেখ হাসিনার সরকার কখনও তরুণদের যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা করেনি। সেই ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠিয়েছেন। আমার সঙ্গে আমার সহকর্মীরা আছেন। আন্দোলনকারীদের ২০ জনের প্রতিনিধি এখানে এসেছেন। তাদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি নিয়ে একটা সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েক মিনিট আগেও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছি। তাদের দাবির যৌক্তিকতা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব।’
‘যারা রোববার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে’ বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘গতকাল উপাচার্যের বাসভবনে তাণ্ডব চলেছে। উপাচার্যের পরিবারকে বাগানে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। সেখানকার ভিডিও ফুটেজ থেকে এই তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। আমি আন্দোলনকারী মেধাবী তরুণদের প্রশ্ন করেছিÑকোটা সংস্কারের সঙ্গে উপাচার্যের সম্পর্ক কী? কোটার সঙ্গে তো তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি ও তার বাসভবন, তার পরিবার কেন আঘাত পাবে? আন্দোলনকারীরা একমত হয়েছে, কিছু অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও সন্ত্রাসীরা এ কাজ করে থাকতে পারে। এখানে ডিএমপি কমিশনার আছেন। তিনি দেখবেন, নিরীহ কেউ যেন গ্রেফতার না হয়। যারা সত্যিকার অর্থে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই যেন অ্যাকশন নেওয়া হয়।’
‘আগামী ৭ মের মধ্যে সরকার কোটা পদ্ধতি রিভিউ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে’ বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এর ফল কী হবে, সেটা আমরা জানাব। সে পর্যন্ত কোটা সংস্কারের এ আন্দোলন স্থগিত থাকবে। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা এখানে রয়েছেন। তারাও ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছেন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রতিটি দাবি পূরণ করার চেষ্টা করছেন। আমরা আশা করছি, তিনি আমাদের দাবি মেনে নেবেন।’
সচিবালয়ের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সরকারের আশ্বাসে এক মাস সময় দিয়েছি। ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন এমন অভিযোগ তুলে এ পদ্ধতি সংস্কারের দাবি উঠেছে। প্রায় এক মাস ধরেই আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত রোববার শাহবাগে আন্দোলন কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় অন্তত দেড় শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। পরদিন (সোমবার) চলমান আন্দোলন রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে কোটা সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হলো।
