সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিনিয়োগের জন্য চট্টগ্রামকে আদর্শ অঞ্চল মনে করা হয়। এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য রয়েছে বন্দর সুবিধা, জমি ও সস্তা শ্রম। এছাড়া মিরসরাই ও আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন, যা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অথচ সম্ভাবনা থাকার পরও গত বছরের চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও ট্রেডিং ব্যবসায় বিনিয়োগ প্রস্তাবনা আগের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সূত্র মতে, গত বছরের চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও ট্রেডিং ব্যবসায় বিনিয়োগ প্রস্তাবনা আগের বছরের তুলনায় কমেছে ২৪৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তবে বেড়েছে প্রকল্প ও কর্মসংস্থান। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প ও বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগ করার জন্য মোট ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ছিল ছয় কোটি ৯৩ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে মোট ১৬ হাজার ৪৪৪ জনের। এর মধ্যে দেশি ১৭১টি প্রকল্প প্রস্তাবনায় বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল পাঁচ হাজার ৮১৬ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ১৩ হাজার ৪৬৯ জনে। একই বছরের ৯টি যৌথ অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ছিল ২৬৭ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার। এতে কর্মসংস্থান হবে দুই হাজর ৭১৬ জন। এছাড়া দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাবনায় ছিল ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এতে কর্মসংস্থান হবে ২৫৯ জন।
অপরদিকে ২০১৬ সালে মোট ১৬১টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ছিল ছয় হাজার ৩৩৯ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। আর কর্মসংস্থান মোট ১৪ হাজার ২৯৩ জনের। এরমধ্যে দেশি ১৫৪টি প্রকল্প প্রস্তাবনায় বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ছয় হাজার ২৫৬ কোটি ৯১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। আর কর্মসংস্থান ১৩ হাজার ৬৩০ জনে। আর পাঁচটি যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ৮০ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার। এতে কর্মসংস্থান ৫৯৪ জন। এছাড়া দুটি বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবে দুই কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হবে ৬৯ জন। মাসভিত্তিক দেশি বিনিয়োগ প্রকল্প নিবন্ধন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) চট্টগ্রাম অফিসের ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ১৮টি প্রতিষ্ঠান ১১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করে। ফেব্রুয়ারিতে ১২টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ নিবন্ধন করে ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, মার্চে ছয় প্রতিষ্ঠান ১৭৪ কোটি ৬৮ লাখ, এপ্রিলে ১২ প্রতিষ্ঠান ২২৯ কোটি ১২ লাখ, মে মাসে ২২ প্রতিষ্ঠান ৭০৮ কোটি ৫৪ লাখ, জুনে ২২ প্রতিষ্ঠান ৭৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার নিবন্ধন করেছে। এছাড়া জুলাইয়ে ১৯টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে চার হাজার ৩৯৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার, আগস্টে ১২ প্রতিষ্ঠান ১১৮ কোটি সাত লাখ, সেপ্টেম্বরে ছয় প্রতিষ্ঠান ৩১ কোটি ৭৩ লাখ, অক্টোবরে ১৬ প্রতিষ্ঠান ১৬৮ কোটি ১৮ লাখ, নভেম্বরে ১৯ প্রতিষ্ঠান ৩৪০ কোটি ৭৩ লাখ ও ডিসেম্বরে ২২ প্রতিষ্ঠান ১৮৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে।
বিডা চট্টগ্রাম কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন কাজ যথাসময়ে শেষ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবশে আরও ভালো হবে। এতে আরও বেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হবে। বিনিয়োগে সরকারের নীতিগত পরিবর্তন আনায় আগামী দুই-তিন বছরে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বহুগুণ বাড়বে বলে আশা করছি।
ব্যবসায়ীদের অভিমত, শিল্প-বাণিজ্যের জন্য আদর্শ স্থান চট্টগ্রাম হলেও জমির স্বল্পতা ও অত্যাধিক জমির দাম, গ্যাস সংকট, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদসহ নানা কারণে থমকে গিয়েছিল চট্টগ্রামে শিল্প-বিনিয়োগ। ফলে বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামের পরিবর্তে দেশের অন্যান্য জেলায় শিল্প স্থাপন করছেন কিংবা আগ্রহী হন। এতে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার পুরোটায় অবিকাশিত থেকে যায়। তবে বর্তমানে বিদ্যামান বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরকারের গ্রহীত বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত সময়ের বাস্তবায়ন হলে অব্যশই এখানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ শতগুণ বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে চলতি মাসে এলএনজির সরবরাহ শুরু এবং ইকোনমিক জোনসহ চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় এখন বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসূফ শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একদিকে অভ্যন্তরীণ কিছু ঝামেলা আছে, অন্যদিকে টানা হরতাল, সংঘাত-সহিংসতা অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত অবস্থার মুখে ঠেলে দিয়েছিল, যা অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
২০১৭ সালে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ২৪৬ কোটি টাকা
