নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রফতানিযোগ্য পণ্যতালিকা বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য নতুন পণ্যের রফতানিকে উৎসাহিত করা হবে। অপ্রচলিত পণ্য রফতানিকারকদের এ ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল বুধবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) মধ্যাহ্নভোজ সভায় ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরের সভাপতিত্বে এ সভায় এনবিআর কর্মকর্তা ও শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তারা অংশ নেন। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত হতে হলে আমাদের রফতানি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিকে মডারেট করতে হবে। এজন্য বেসরকারি খাতকে সমৃদ্ধ করা দরকার। আমরা এনবিআর থেকে ব্যক্তি খাতের জন্য সুবিধাজনক বাজেট প্রণয়ন করতে চাই। সে সঙ্গে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপির হার বাড়াতে হবে। আমাদের নাগরিকদের ট্যাক্স দিতে সক্ষম করার জন্য কিছু পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা নেব। করপোরেট কর ও বহুস্তরের ট্যাক্স ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। এটা পুনর্বিন্যাস ও বাস্তবায়ন হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আমরা প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল রফতানির উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এজন্য আমরা কোনো প্রণোদনা পাই না। মোটরসাইকেল রফতানিতে আমাদের প্রণোদনা প্রয়োজন।’ এ সময় বক্তারা বলেন, ‘দেশে ১৫০ সিসির বেশি সক্ষমতার মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ নেই। অথচ ২৫০ সিসির মোটরসাইকেল রফতানির চাহিদা আছে। এখন শুধু রফতানির উদ্দেশ্যে উন্নতমানের মেশিন আমদানির সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রফতানি বৈচিত্র্যকরণে আমরা আগ্রহী। রফতানির পণ্যতালিকা বাড়াতে উদ্যোক্তাদের বন্ড সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। যে কেউ নতুন পণ্য রফতানি করতে চাইলে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে চাই। তবে তিনি বন্ডের আওতায় যা আমদানি করবেন, সেটা দেশের বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না।
এ সময় বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, আমাদের দেশে গড়ে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী বা ভিন্নভাবে সক্ষম জনসংখ্য রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এসব নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক প্রণোদনা কিংবা ট্যাক্স মওকুফ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একটি উদাহরণ সৃষ্টির জন্য এমনটি করা যেতে পারে। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘এরই মধ্যে এনবিআরকে বাজেটের বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মূল কনসার্ন হলো শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। আগামী কয়েক দশকের শিল্পায়নের চ্যালেঞ্জ মেকাবিলা করতে হলে দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। এজন্য এমসিসিআই থেকে প্রস্তাব করেছি যে, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব আমদানিতে উদ্যোক্তাদের তাদের মোট ব্যয়ের অন্তত ছয় শতাংশ শুল্কমুক্তভাবে ব্যয় করার সুযোগ দেওয়া উচিত।’
বক্তারা আরও বলেন, কোম্পানির কর্র্মচারীর আয়কর দেওয়া তার নিজের দায়িত্ব। কোনো কর্মী যদি তার নিজের আয়কর পরিশোধ না করেন, তার জন্য কোম্পানিকে দায়ী করা অযৌক্তিক। কিন্তু এমনটি করা হচ্ছে। এটি বন্ধের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান বক্তারা।