আয়করের পরিধি বাড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। রফতানি আয় সে তুলনায় বাড়েনি। অন্যদিকে করহার না বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানো দরকার। অর্থাৎ যারা ট্যাক্সের বাইরে আছে তাদের ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কমপক্ষে এক কোটি মানুষকে ট্যাক্সের আওতায় আনা দরকার। বর্তমানে অনেকের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আয়কর প্রদানের হার বাড়লে তা অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক শাহজাহান মিনা এবং সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী।

অধ্যাপক শাহজাহান মিনা বলেন, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট যেহেতু আমদানি ও রফতানির সঙ্গে জড়িত। সেহেতু আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। আমদানি বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি রেমিট্যান্সের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশি রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য আমাদের রফতানির প্রয়োজন। এটা সেভাবে হচ্ছে না। রফতানি না হওয়াটা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ লক্ষণ। আমাদের যারা বিদেশে কাজ করে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স মাঝে কিছুটা বেড়েছিল কিন্তু এটি আশানুরূপ বাড়তে পারছে না। আমাদের যদি রফতানি কমে যায় সরকার যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আশা করছে সেটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে অধিক শিল্পায়নের দরকার। রফতানি বাড়ানোরও দরকার আছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সরকার জিডিপির আনুমানিক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হচ্ছে তার সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহের সঙ্গতি নেই। এটা অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে তারল্য সংকট চলছে এর  মূল কারণ, ঋণখেলাপিদের কাছে টাকা আটকে রয়েছে। এ টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে এবিবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রীর কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। টাকাগুলো যদি আমরা সময়মতো উদ্ধার করতে পারতাম  তাহলে এ সংকট হতো না।

এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, আশা করা যাচ্ছে ঈদ উপলক্ষে দেশের ভালো একটি রেমিট্যান্স আসবে। তবে আমদানি বাড়ার কারণে দেশের ফরেন কারেন্সি ওপর একটি চাপ পড়বে বলে মনে হচ্ছে। আর রফতানি যে বাড়েনি তা বোঝা যাচ্ছে দেশিও ভোগ ব্যয় বাড়াতে বা বিদেশে টাকা পাচার হওয়াতে। তাছাড়া নির্বাচনের বছরে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীরা একটু চিন্তার মধ্যেই থাকে কখন কি হয়ে যায় এই ভেবে। যে কারণে এ সময় তারা সব সময়ই একটু নিরাপদে থাকার চেষ্ট করে। আর এটি পৃথিবীব্যাপী হয়ে থাকে ফলে আমাদের দেশেও হতে পারে। কাজেই এ জায়গাগুলোতে পর্যবেক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে বলে মনে করি। তাই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনানুকভাবে নিয়মের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা দরকার। পাশাপাশি যারা আইনের মধ্যে থাকতে চায় তাদের আইনের সুরক্ষাও দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইদানীং আমদানি ও রফতানির মধ্যে ভারসাম্য থাকছে না। সামনে ঈদের মৌসুমে রেমিট্যান্স কিছুটা বাড়বে। হজের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে কিছু টাকা আসবে।

তিনি আরও বলেন, করহার না বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানো দরকার। অর্থাৎ যারা ট্যাক্সের বাইরে আছে তাদের ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কমপক্ষে এক কোটি মানুষকে ট্যাক্সের আওতায় আনা দরকার। বর্তমানে অনেকের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।  আয়কর প্রদানের হার বাড়লে তা অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদি পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হার কমানো যায়, সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার লাভবান হবে। অনেক কোম্পানি বাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ বাড়বে এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের পরিধিও বাড়বে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এ বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া উচিত।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০