মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ: বিশ্বের অগ্রসরমান তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা। এতে ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। তবে সে অনুপাতে বাড়ছে না অনলাইন পেমেন্টের পরিমাণ। ই-কমার্স লেনদেনের জন্য বেশকিছু ব্যাংকে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস (ওপিজিএসপি) চালু থাকলেও এর ব্যবহারে খুব একটা আগ্রহী নন গ্রাহকরা।
বাংলাদেশের ই-কমার্স সাইটগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ২৫০। এসব সাইট থেকে গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্রয় করতে পারেন। তবে এসব লেনদেনের পেমেন্টের মাত্র পাঁচ শতাংশ হচ্ছে অনলাইনে। বাকি লেনদেন হয় নগদে।
ই-ক্যাবের পরিচালক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন শেয়ার বিজকে জানান, ই-কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে বর্তমানে দৈনিক ২৫ হাজারেরও বেশি লেনদেন হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ লেনদেনই হয় নগদ অর্থে। কারণ ই-কমার্স সাইটে যেসব পণ্য পাওয়া যায়, বেশিরভাগ গ্রাহকই চান তা সরাসরি দেখে তারপর পেমেন্ট করতে। আর মাত্র পাঁচ শতাংশ গ্রাহক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট করেন।
এদিকে অনলাইন পেমেন্ট না বাড়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে ই-কমার্সের লেনদেনের জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস (ওপিজিএসপি) চালু করা ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৩৯ শতাংশ ব্যাংকে এ সেবা চালু রয়েছে। তবে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না ই-কমার্স সাইট ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে। ফলে বড় অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে এ সেবায়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে দেশে সর্বপ্রথম ই-কমার্স পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। বর্তমানে ৩৫০টি ই-কমার্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানেরর সঙ্গে ব্যাংকটির ই-পেমেন্টের চুক্তি রয়েছে ব্যাংকটির। তবে হচ্ছে না আশানুরূপ লেনদেন। এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংকসহ আরও কিছু ব্যাংকে এ সেবা চালু আছে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাসেম মো. শিরিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরাই প্রথম ই-কমার্স পেমেন্ট প্রসেসিংয়ের জন্য অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস চালু করি, এর জন্য বিনিয়োগ করি, লোকবল নিয়োগ দেই। কিন্তু গ্রাহকদের কাছ থেকে আমরা আশা অনুযায়ী সাড়া পাচ্ছি না। ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন না করে বেশিরভাগ গ্রাহকই নগদ লেনদেন করছেন। এতে আমরা কমিশন কম পাচ্ছি, ফলে এ সার্ভিসে লোকসানে পড়ছি।’
দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কার্ড ব্যবহার হচ্ছে সোয়া কোটিরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এসব কার্ডের ৮৬ শতাংশই ব্যবহƒত হচ্ছে এটিএম লেনদেনের ক্ষেত্রে। আর মাত্র দুই শতাংশ কার্ড ব্যবহƒত হচ্ছে ই-কমার্সের লেনদেনে।
ই-ক্যাবের পরিচালক মোহাম্মদ সাহাবউদ্দীন মনে করেন, ভোক্তাদের অনলাইন পেমেন্টে আগ্রহীর কাজটি করতে হবে ব্যাংকেই। কারণ যেসব ব্যাংকের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস চালু আছে সেসব ব্যাংকের অনেক গ্রাহকই জানেন না যে তারা এ ব্যাংকের মাধ্যমেই অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, অনলাইনে পেমেন্টের ক্ষেত্রে অনেক সময় বেশ ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রাহক তা জানতে পারেন না বলে এ সেবায় আগ্রহী হন না। এ জন্য সব ব্যাংককে একই ছাতার নিচে এসে কাজ করলে এই পেমেন্ট অনেক বড় পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলে মত তার।
ই-ক্যাবের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ই-কমার্সের মাধমে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মাত্র এক শতাংশ লেনদেন হয় অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই শতাংশ আর কার্ডের মাধ্যমে হয় দুই শতাংশ লেনদেন। বাকি ৯৫ শতাংশ লেনদেনই হয় নগদ অর্থের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকগুলো সম্প্রতি আইটি খাতে বেশ বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। যুগের তালে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-কমার্স খাতে অগ্রগতি করছে। তবে অনলাইন পেমেন্ট বাড়াতে ব্যাংগুলোকে আরও প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো প্রয়োজন।