রানা প্লাজায় আহতদের ৪৯% এখনও কর্মহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহতদের ৪৯ শতাংশ শ্রমিক এখনও কোনো কাজ করতে পারছেন না। শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পর্যাপ্ত উন্নতি না হওয়ায় তাদের এ অবস্থা। গত বছর এই কর্মক্ষম আহত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনার পর পর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেসব উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ধ্বংসের ৫ বছর: শোভন কর্মস্থল বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন। এতে আরও বলা হয়, ওই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে রয়েছে। আর ২২ শতাংশ এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবে ২১ দশমিক ছয় শতাংশ শ্রমিক আবার নতুন করে কর্মে যুক্ত হতে পেরেছেন।

‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের শিল্প: উদ্যোগ ও পরিবর্তন’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. জাকির হোসাইন। এতে বলা হয়, এখনও দেশের শ্রম পরিবেশের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ফ্যাক্টরিগুলোতে এখনও শতভাগ নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত হয়নি। শ্রমিকদের মজুরি এখনও অনেক কম, যা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এমনকি কোনো কোনো ফ্যাক্টরি নিয়মিত বেতন পর্যন্ত দেয় না। শ্রমিকরা প্রায়ই তাদের কর্মস্থলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছবি বিশ্বাস এমপি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা সারা পৃথিবীকেই নাড়া দিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের পথে এগোচ্ছি। এখানে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাবেÑএটা কোনো অনুকম্পা নয়, এটা তাদের ন্যায্য পাওনা, সাংবিধানিক অধিকার। সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা না গেলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগোতে পারব না। সঠিক মজুরি ও ন্যায্য মজুরির বিষয়টি খুবই জরুরি। এই বিষয়গুলো আমি সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করব।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের অফিসার ইন চার্জ অ্যানি লোরা হেনরি শ্রমিকদের টেকসই নিরাপত্তার জন্য জাতীয় কর্মচারী বিমা চালুর দাবি জানান। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে। মৌলিক নিরপত্তা ইস্যুতে কারখানাগুলো কিছুটা উন্নতি করেছে। সরকারকে কারখানাগুলো বেশি বেশি পরিদর্শন করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হয় না। মাসিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার বেশি হলেও একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি মাত্র পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘মালিকরা অনেক ক্ষমতাধর। মালিকপক্ষ ইচ্ছা করে বা স্বেচ্ছায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয় না। ক্ষতিপূরণের নির্দিষ্ট কোনো মান নেই। কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে মাত্র এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এটা অযৌক্তিক। এর কোনো যৌত্তিক ভিত্তি নেই।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে যাচ্ছে। কিন্তু এসবের কিছুই সম্ভব হবে না যদি কিনা বাংলাদেশ তার দেশের  শ্রমিকের মান, তাদের সম্মান ও তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে না পারে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা রাজধানীর বিভিন্ন ভবন পরিদর্শন করেছি। আমরা দেখেছি মানুষ ভবন নির্মাণে নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন। আমরা বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছি, যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ আছে সেসব ভবনের বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। মালিকদের পরামর্শ দিয়েছি এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০