আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে অতিরিক্ত পাথরবাহী ট্রাক পারাপারের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ঐতিহাসিক সোনাহাট রেলসেতু। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোনাহাট রেলসেতু রক্ষায় এর আগে কয়েক দফা মানববন্ধন ও অবরোধ করেও কোনো সুফল পায়নি এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার পাইকেরছড়া এলাকায় দুধকুমার নদের ওপর ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মাণ করা হয় সোনাহাট রেলসেতু। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ২০-২৫ টনের অধিক পাথরবাহী শত শত ট্রাক পারাপার হয়। এ কারণে অনেক আগেই সেতুর স্টিলের পাটাতন নষ্ট হয়ে যায়। জোড়াতালি দিয়ে পাটাতন সংস্কার করে পারাপার অব্যাহত রয়েছে অতিরিক্ত পাথরবাহী ট্রাক। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ সীমান্তবর্তী এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত বন্ধ এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
১৮৭৯ সালে তৎকালীন নর্দান বেঙ্গল রেলওয়ে বেঙ্গল ও আসামের সঙ্গে যোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাইকেরছড়া ইউনিয়নে দুধকুমার নদের ওপর সোনাহাট রেলসেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পর সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী যাতে নদী পার হতে না পারে সে জন্য ভারতীয় সেনারা ডিনামাইন দিয়ে সেতুর দুটি সিøপার উড়িয়ে দেয়। এরপর দীর্ঘদিন সেতুটি ছিল অব্যবহƒত। পরে জাতীয় পার্টির আমলে কুড়িগ্রাম-১ আসনের তৎকালীন এমপি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও কুড়িগ্রাম জেলার তৎকালীন গভর্নর শামসুল হক চৌধুরী সোনাহাট রেলসেতু মেরামত করে জনসাধারণের যাতায়াতের সুযোগ করে দেন।
দুধকুমার নদের ওপর এ সেতু ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, চরভুরুঙ্গামারী, আন্ধারীঝাড় ও তিলাই, নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস এবং নারায়ণপুর ইউনিয়নের সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার যোগাযোগ রক্ষার একমাত্র পথ। বিএনপি সরকারের আমলে সেতুর তীর রক্ষাবাঁধের হাজার হাজার টন পাথর নিলামে বিক্রি করা হয়। এতে সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ে সেতু। বর্তমান সরকার বাঁধ দেওয়ায় সেতুটি রক্ষা পায়।
এদিকে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুটিকে ঝুঁকিপুর্ণ চিহ্নিত করে ১০ টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। এরপরও সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন ২০-২৫ টনের অধিক পাথরবাহী শত শত ট্রাক পারাপার হওয়ায় সেতুটির বিভিন্ন অংশে দেবে গেছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক ট্রাক পারাপারের সময় হচ্ছে বিকট শব্দ। এতে সেতুর সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছেন এ সেতু দিয়ে চলাচলকারী হাজারো মানুষ। রেলসেতুটি রক্ষায় এর আগে কয়েক দফা মানববন্ধন ও অবরোধ করেও কোনো সুফল পাননি এলাকাবাসী। এখনও জোড়াতালি দিয়েই পারাপার হচ্ছে অতিরিক্ত পাথরবাহী ট্রাক।
পাথরবাহী ট্রাক ড্রাইভার জসিম মিয়া জানান, তার ট্রাকে ২২ টন পাথর নেওয়া হয়েছে। অনেক ট্রাকে ২৫-২৭ টন পাথর ওঠানো হয়।
এ ব্যাপারে পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক সরকার জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১০ টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ সাইনবোর্ড লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সরকারি ব্যবস্থা। জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে যে কোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দুধকুমার নদের পূর্ব পাড়ের তিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হবে।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মো. খুরশীদ আলম জানান, সোনাহাট রেলসেতুর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত পাথরবোঝাই ট্রাক যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের নিয়ে সভা করে অতিরিক্ত পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন পর আবারও অতিরিক্ত পাথরবাহী ট্রাক পারার শুরু হয়। সোনাহাট রেলসেতু রক্ষা এবং অতিরিক্ত পাথরবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট রেলসেতু ঝুঁকিতে
