নগদ অর্থ সংকটে ভারত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০১৬ সালে নোট বাতিলের কারণে সৃষ্ট সংকটের পর দ্বিতীয়বারের মতো নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে ভারত। চলতি সপ্তাহে অন্তত আটটি রাজ্যের এটিএম বুথে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাংক ম্যানেজাররা বলছেন, কয়েক মাস ধরেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য প্রাথমিকভাবে সরকারকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নগদ অর্থের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে বলে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস।
গত সোমবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গাল শহরের রাস্তায় স্কুটারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কুমার লোহাটি। চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বুথ থেকে বুথে ঘুরে অর্থ তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি। এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি বুথে অর্থ তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো অর্থ তুলতে পারিনি।’ ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট লোহাটি পরদিন বিকালে বাড়ির পাশের এটিএমে অর্থ ভর্তি করা হলে সেখান থেকে তুলতে সক্ষম হন।
ওয়ারাঙ্গালে প্রকৌশলীর কাজ করেন ৫৫ বছরের জি গোবিন্দর। তিনি বলেন, তার প্রজেক্টে কর্মরত শ্রমিকদের পে-চেকের মাধ্যমে পারিশ্রমিক দিয়েছেন তিনি। তবে তারা ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে পারেনি।
দেশের বৃহত্তম ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় তার হিসাব রয়েছে। নিজেও তিনি ওই ব্যাংকের কোনো শাখা থেকে পর্যাপ্ত অর্থ তুলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘৪০ হাজার রুপি তুলতে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে বলল, দুঃখিত আমরা আপনাকে ২০ হাজার দিতে পারব।’
ফসল কাটা আর বিয়ের মৌসুমকে সামনে রেখে অর্থের চাহিদা বাড়ছে। এই সংকট তাড়াতাড়ি নিরসন করা না গেলে আরও বেশি গ্রাহক তাদের অর্থ ফেরত চাইবে, তখন এই সংকট আরও বেশি বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নগদ অর্থের এ সংকটের নির্দিষ্ট কোনো একটি কারণ নেই। বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে এ সংকট তৈরি হয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে একই ধরনের নগদ অর্থের সংকটে পড়েছিল ভারত। নরেন্দ্র মোদি সরকার হঠাৎ করে কয়েকটি নোট বাতিলের ঘোষণা দিলে ওই সংকট তৈরি হয়। বর্তমান সংকটের মূলে সরকারের নীতি ছাড়াও রয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রতি নাগরিকদের অনাস্থা। কয়েকটি ব্যাংক কেলেঙ্কারির কথা সামনে আসায় এই অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের মানুষের বিশ্বাস কমেছে। ব্যাংকের দুর্বল নিয়ন্ত্রণকে কাজে লাগিয়ে কয়েক বছর ধরে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলার অর্থ চুরির দায়ে গত ফেব্রুয়ারিতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী নীরব মোদিকে অভিযুক্ত করে তদন্তকারীরা। এছাড়া আরও কয়েকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাতেও ব্যাংকের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমেছে। এ কারণে বাড়িতে অর্থ রাখার আগ্রহও বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান ব্যাংকের ওয়ারাঙ্গালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাধা রানি বলেন, অনেক গ্রাহক ভয় পাচ্ছেন। তারা বাড়িতে অর্থ রাখছেন, না হয় আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। ব্যাংকে রাখা হলে অর্থ হারানোর ভয় তাদের।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০