ব্যাংক খাতের লভ্যাংশে খুশি নন শেয়ারহোল্ডার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারের শক্তিশালী খাত ব্যাংকের লভ্যাংশে খুশি নন শেয়ারহোল্ডাররা। বছরের শুরুতে সন্তোষজনক মুনাফা দেখানোর কারণে এই খাত থেকে ভালো লভ্যাংশ পাবেন, এমনটি ভেবেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কারণ পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর অনেক ব্যাংকের নিট মুনাফা কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের লভ্যাংশে।
জানা যায়, ২০১৭ সালজুড়ে ব্যাংকে আগের তুলনায় ঋণপ্রবৃদ্ধি বেশি ছিল। আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম থেকেও ভালো কমিশন আয় হয়েছে। তবে ফারমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংকের জালিয়াতির ইস্যুতে অস্বস্তি ছিল আমানতকারীদের মধ্যে। যার জের ধরে শেষ ছয় মাসে আমানতের সুদ বেড়েছে। পুঁজিবাজার থেকেও ভালো আয় হয়নি। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতের নিট মুনাফায় মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। সরকারি ব্যাংকের নিট মুনাফা বাড়লেও কমেছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ১২টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এসব ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার হার রয়েছে অনেকটা গত বছরের মতোই। তবে সামগ্রিকভাবে আগের চেয়ে বোনাস লভ্যাংশের হার বেড়েছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ সালে আইএফআইসি ব্যাংক ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত বছরে ব্যাংকটি একই হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ঘোষণা করেছে সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার।
অন্যদিকে ওয়ান ব্যাংকের নগদ এবং বোনাস মিলিয়ে লভ্যাংশের পরিমাণ ২০ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ২৩ শতাংশ। তালিকাভুক্ত প্রাইম ব্যাংক ২০১৭ সালে প্রদান করে নগদ এবং বোনাস মিলিয়ে ১৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।
এদিকে গত বছরের মতো এবারও ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে উত্তরা ব্যাংক। একই অবস্থা আল-আরাফাহ্-ইসলামী ব্যাংকের। এ ব্যাংকটিও গত বছরের মতো এবারও ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে গত বছর পুরোটা নগদ থাকলেও এবার পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার রয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাংক এশিয়া ২০১৭ সালে সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। গত বছর যার পরিমাণ ছিল ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার। আর প্রিমিয়ার ব্যাংক এ বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। গত বছর নগদ ও বোনাস মিলিয়ে যার পরিমাণ ছিল ১২ শতাংশ। গত বছরের মতো সর্বশেষ আর্থিক বছরে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটি পাঁচ শতাংশ নগদ এবং পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
পূবালী ব্যাংক এ বছর ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর নগদ এবং বোনাস মিলিয়ে যার পরিমাণ ছিল ১৩ শতাংশ। একইভাবে সর্বশেষ বছরে নগদ এবং বোনাস মিলিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের ২২ শতাংশ লভ্যাংশ দিচ্ছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। গত বছর এ প্রতিষ্ঠানটি ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। যার মধ্যে পাঁচ শতাংশ ছিল বোনাস শেয়ার। আর ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৭ সালের জন্য ২৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর এ ব্যাংকটির লভ্যাংশ প্রদানের হার ছিল ৩০ শতাংশ। যার মধ্যে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার।
নিট মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার হিসাব হয়। নিট মুনাফার ওপর ভিত্তি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। অবশ্য লভ্যাংশ ঘোষণার আগে নিট মুনাফা থেকে একটি অংশ ‘বিধিবদ্ধ রিজার্ভ’ হিসেবে মূলধনে নিতে হয়। দেশের বেসরকারি ব্যাংকের অধিকাংশই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ফলে এসব ব্যাংকের মুনাফা নিয়ে বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ বেশি থাকে।
জানতে চাইলে ওয়ান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফকরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, আমি মনে করি সব প্রতিষ্ঠানই তার শেয়ারহোল্ডার সন্তোষজনক লভ্যাংশ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক সময় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এবং প্রভিশন সংরক্ষণ করার কারণে লভ্যাংশ প্রদান একটু কমে গেছে। তবে এটা সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ব্যাংকগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো ২৪ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে। আগের বছর যা ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পরিচালন মুনাফা বেড়েছে তিন হাজার ৭৯ কোটি টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে নিট মুনাফা ৯৮৯ কোটি টাকা বেড়ে ৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আগের তুলনায় বেড়েছে। এ কারণে অনেকের আশানুরূপ মুনাফা হয়নি।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কিছু ব্যাংকের মুনাফা কম হওয়ার কারণ প্রধানত প্রভিশন সংরক্ষণ। এই কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা কমে গেছে। আয় কম হওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো বোনাস শেয়ার দিয়ে লভ্যাংশের হার ঠিক রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০