নিজেরাই কনটেইনার স্ক্যানার চালাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: আমদানি-রফতানির কনটেইনারগুলো স্ক্যানিং করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কাস্টমস কর্তৃক জেটির চারটি গেটে একটি মোবাইল স্ক্যানার ও তিনটি রিলোকেটেবল স্ক্যানার এবং ১০টি রেডিয়েশন ডিটেকশন ইকুইপমেন্ট রয়েছে। এগুলো পরিচালনার জন্য গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে আইনি জটিলতায় চুক্তি না হওয়ায় আপাতত নিজেরাই এ স্ক্যানার পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
তথ্যমতে, চিটাগাং পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্টের আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও দেখাশোনা করার মতো নিজস্ব দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল না থাকায় সে বছর দরপত্র আহ্বান করা হয়। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ছয় বছরের জন্য পরিচালনার কাজ পায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি এসজিএস। পরে যথাযথ বিধিবিধানমতে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়।
এই মেয়াদ অতিক্রান্ত হলে সর্বশেষ ১৭ আগস্ট ২০১৭ সালে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চুক্তির মেয়াদ আবার বাড়ায়। এতে একটি মোবাইল কনটেইনার স্ক্যানারের জন্য ১৭ অক্টোবর ২০১৭ এবং তিনটি রিলোকেটেবল কনটেইনার স্ক্যানার ও ১০টি রেডিয়েশন ডিটেকশন ইকুইপমেন্টের জন্য ২২ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত।
নিয়ম অনুযায়ী গতকাল ২২ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এই কোম্পানিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মেশিন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নতুন করে চুক্তির প্রয়োজন পড়ে। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কনটেইনার স্ক্যানিং কার্যক্রম পরিচালনা স্বাভাবিক রাখার জন্য গত বছরের ২৪ নভেম্বর জাতীয় দৈনিকে দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে ছয়টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে যোগ্য বিবেচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ন্যুকটেকের বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধি ঢাকার প্রতিষ্ঠান ফাইভ-আর অ্যাসোসিয়েটস।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে দরপত্র আহ্বান করায় এসজিএসের সঙ্গে টানাপড়েন চলতে থাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। এরপর এসজিএসের কর্মীদের পক্ষ থেকে দরপত্রের কার্যক্রম বন্ধে রিট করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে গত ২৬ ডিসেম্বর দরপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করা হয় এবং আগ্রহী ছয়টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ৭ ফেব্রুয়ারি আবার দরপত্র উš§ুক্ত করার তারিখ নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তখন দরপত্র কার্যক্রম নিয়ে এসজিএস আবার আপত্তি তুললে ২০ ফেব্রুয়ারি আবার দরপত্র উš§ুক্তকরণের সময় বাড়ায় কাস্টমস। এরপর দরপত্রের কার্যক্রম বন্ধে গত ১২ মার্চ এসজিএসের পক্ষ থেকে আবারও উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। তবে ২৫ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ রিট মামলাটির স্থগিতাদেশ আগামী ৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেন। ফলে বিবেচিত প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে চুক্তির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে কনটেইনার পরিচালনা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ স্ক্যানার পরিচালনা করবে। আজ থেকে ছয় রাজস্ব কর্মকর্তা এসব স্ক্যানার পরিচালনা করবেন। এর আগে তিন রাজস্ব কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করতেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ ও মতামত গত দুই সপ্তাহ আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানারের কার্যক্রম সর্বক্ষণ সচল রাখতে ফাইভ-আর অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ফাইভ-আর অ্যাসোসিয়েটস এরই মধ্যে পৃথক একটি চুক্তির আওতায় কনটেইনার স্ক্যানিং কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গত শনিবার থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০১৬ সালে চীন সরকারের সহায়তায় দেশের চারটি কাস্টম হাউজের জন্য নতুন চারটি মোবাইল কনটেইনার স্ক্যানার কেনা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস ছাড়াও কমলাপুর আইসিডি, মংলা কাস্টমস ও বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০