ইসমাইল আলী: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী ৪০ শতাংশ ট্রাক ওভারলোডেড। এতে চার লেন নির্মাণ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মহাসড়কটি। অন্যান্য মহাসড়কের অবস্থাও একই। তাই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে ওভারলোডেড ট্রাকের প্রবেশ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর ২০টি স্থানে ২৮টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে সওজ। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি বছর জুলাইয়ে শুরু করে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিপিপির তথ্যমতে, ২০০৪ সালে প্রণীত এক্সেল লোড নীতিমালা অনুযায়ী দুই চাকাবিশিষ্ট ফ্রন্ট এক্সেল ও চার চাকাবিশিষ্ট রেয়ার এক্সেলের সর্বোচ্চ ওজন ধরা আছে সাড়ে ১৫ টন। তবে ছয় চাকাবিশিষ্ট বেশিরভাগ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে ২০-৩০ টন পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এতে সড়কের আয়ুষ্কাল দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বহনকারী যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
মহাসড়কে ওভারলোডেড ট্রাক চলাচল বন্ধে সওজের উদ্যোগে এ পর্যন্ত পাঁচটি স্থায়ী ও ১০টি পোর্টেবল (স্থানান্তরযোগ্য) এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র চারটি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র চালু আছে। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে গত বছর অক্টোবরে এক লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৫টি ট্রাক ওজন করা হয়। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৬৬টি বা ৪০ শতাংশ ট্রাক ছিল ওভারলোডেড। অন্যান্য মহাসড়কেও একই অবস্থা।
এজন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর ২০টি স্থানে ২৮টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, বাগেরহাট, নবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ফেনী, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর ও সিলেটে নির্মাণ করা হবে এসব কেন্দ্র। এজন্য ৯০ সেট ওয়ে মেশিন দরকার হবে। পাশাপাশি দুই লাখ আট হাজার বর্গমিটার রিজিড পেভমেন্ট, ২৫ লাখ ২৭ হাজার ঘনমিটার সড়ক বাঁধ, ২৮ হাজার মিটার পানি নিষ্কাশন ড্রেন, ১২ হাজার বর্গমিটার পার্কিং এরিয়া ও ৪০ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এদিকে প্রকল্পটির আওতায় ২২ হাজার মিটার মিডিয়ান, দুই তলাবিশিষ্ট কন্ট্রোল স্টেশন, ৩৭২ বর্গমিটার ওয়ে হাউজ, গণশৌচাগার, ক্যাফেটরিয়া, ওয়্যার হাউজ, ওয়ে ব্রিজ, সেপটিক ট্যাংক, সোক পিট, বাউন্ডারি ওয়াল ও সাবমারসিবল পাম্প নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর, কন্ট্রোল স্টেশন এলাকায় রোড মার্কিং, ট্রাফিক সাইনসহ বেশকিছু কাজ করা হবে।
জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, সারা দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ছে। পাশাপাশি সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো ক্রমান্বয়ে চার লেন করা হচ্ছে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল অনেক বাড়বে। তাই মহাসড়কগুলো রক্ষার্থে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এতে মহাসড়কের প্রবেশমুখেই ওভারলোডেড ট্রাক আটকানো যাবে। ফলে মহাসড়কের আয়ুষ্কাল বাড়বে, পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও কমবে।
উল্লেখ্য, পণ্য পরিবহনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে এমনিতেই বেশি ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ। ছয় চাকার দুই এক্সেলের ট্রাকে ভারতে পণ্য পরিবহন করা যায় ১৬ দশমিক ২০ টন। একই ধরনের ট্রাকে নেদারল্যান্ডস পণ্য পরিবহনে অনুমতি দিয়েছে সাড়ে ২১ টন। হাঙ্গেরিতে এ ধরনের ট্রাকে ২০ টন আর ইতালি, জার্মানি, স্পেন, গ্রিস, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতে ১৮ টন পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এ ধরনের ট্রাকে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ২২ টন। এর পরও এক্সেল লোডের নির্ধারিত সীমা মানতে চায় না ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকরা।