উৎপাদন বন্ধ থাকা রহিমা ফুডের শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থান

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘদিন থেকে উৎপাদন নেই খাদ্য খাতের রহিমা ফুডের। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন কোনো সুখবর নেই যাতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বাড়তে পারে। তার পরও টানা বাড়ছে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর। এক মাসেরও কম সময়ে এই শেয়ারের দর বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।
রহিমা ফুডের উৎপাদন বন্ধ থাকায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০১৭ থেকে মার্চ ’১৮) প্রতিষ্ঠানটির কোনো ধরনের পণ্য বিক্রি হয়নি। কিন্তু এ সময়ে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও কারখানা বাবদ ব্যয় বেড়েছে। আগের বছর প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ব্যয় ছিল ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ বছর ৯ মাসে তা বেড়ে হয়েছে এক কোটি এক লাখ ৯৫ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বন্ধ থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি ২০ কোটি টাকার সম্পদ বিক্রি করেছে, যা নিট মুনাফায় দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটির ৯ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রহিমা ফুডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শহিদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা যা করেছি তা নিয়ম মেনেই করেছি। নিময় অনুযায়ী জমি বিক্রির অর্থ ক্যাপিটাল গেইনে যোগ করা হয়েছে। সম্প্রতি শেয়ারের দর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোম্পানির জানার বিষয়। শেয়ারের দর কেন হ্রাস-বৃদ্ধি পায় তা বিনিয়োগকারীরাই ভালো বলতে পারবেন।
প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, এক মাসেরও কম সময়ে শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। গত ২৮ মার্চ এই শেয়ারের দর ছিল ১৩৫ টাকা। এর পর থেকে টানা বাড়তে থাকে এ শেয়ারের দর। যদিও গতকাল এর দর কিছুটা কমে লেনদেন হয়েছে ১৭৯ টাকা ৩০ পয়সায়। জেড শ্রেণিভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের মধ্যে ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানি পরিচালকদের কাছে। এছাড়া ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার। আর চার দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন বিদেশিরা। বাকি ৩৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে রহিমা ফুডের প্রশাসনিক ও কারখানা ব্যয়ের পাশাপাশি ডেফার্ড টেক্সবাবদ সাত লাখ ৭২ হাজার টাকা ও করবাবদ দুই হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এক্ষেত্রে মোট ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে এই ব্যয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির সুদজনিত আয় হয়েছে ২১ হাজার টাকা। ফলে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে এক কোটি ৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বা শেয়ারপ্রতি শূন্য দশমিক ৫৫ টাকা।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বাড়ার পেছনে গুজব দায়ী ছিল মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে গুজব ছিল প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় যাচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা দুর্বল সেসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে সব সময় কোনো না কোনো গুজব থাকে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উচিত এসব এড়িয়ে চলা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রহিমা ফুডের মোট জমি ছিল ২৩৩ দশমিক ৫০ ডেসিম্যাল। এর মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ’১৮) ১৩১ দশমিক ৫০ ডেসিম্যাল বিক্রি করে দিয়েছে। কোম্পানিটি এটি কিনেছিল এক কোটি পাঁচ লাখ টাকায়, যা বিক্রি করা হয়েছে ২০ কোটি টাকায়। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির ক্যাপিটাল গেইন হয়েছে ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে এ-জাতীয় গেইন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ায় নিট মুনাফা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় না।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০