আপনিও বাড়াতে পারেন সবজি-ফলমূলের পুষ্টিমান

আমরা জানি যে, শরীরকে সঠিক পুষ্টি দিতে ভাত মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। এগুলো দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোকেমিক্যাল ও ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে। তবে প্রচুর শাকসবজি খেয়েও আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারি যদি এসব খাবার যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও রান্নার উপায় না জানি। আজকে আমরা এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

কাঁচা খাবারের ক্ষেত্রে সবসময় গাঢ় রঙের ফল বা সালাদ বাছাই করতে হবে। ফলমূল ও সবজির পাঁচটি রঙ আছে- লাল, বেগুনি বা নীল, কমলা, সবুজ ও সাদা। এসব রঙের ভিন্ন ভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কেমিক্যাল রয়েছে যাদের ফাইটোকেমিক্যাল বলা হয়। স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ গুণসম্পন্ন ফাইটোকেমিক্যালগুলোর কারণে ফল বা সবজির রঙ এত আকর্ষণীয় দেখায়। তাই প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হবে, রংধনু খাবার খাচ্ছি কিনা অর্থাৎ খাবারের প্রাকৃতিক বর্ণে রংধনুর সবকটি রঙ আছে কি না। আর হ্যাঁ, যতটা সম্ভব কৃত্রিম রঙ মিশ্রিত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

কাঁচা ফল বা সবজি যতটা সম্ভব তাজা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেননা ফল ও সবজি আহরণের পর যত সময় গড়ায় ততই কিছু ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ কমতে থাকে। এ জন্য স্থানীয় ও মৌসুমি ফল বাছাই করা বুদ্ধিমানের। তাছাড়া গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া সব জনপদের রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সে অঞ্চলের মাটির ফসলে থাকে। সুতরাং বিদেশি ফল মানেই বেশিকিছু তেমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে জুসকে ফলের বিকল্প ভাবা যাবে না। এতে যেমন থাকে কৃত্রিম রঙ, প্রিজারভেটিভ, চিনি ও লবণ, তেমনি থাকে না শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক আঁশ যাকে ইদানীংকালে খাদ্যের সপ্তম উপাদান বলা হয়।
সালাদ খাবার সময় তেল (সরষে, অলিভ) মিশিয়ে নিতে হবে। কারণ ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘কে’ পানিতে দ্রবীভূত হতে পারে না বলে শরীর এদের শোষণ করতে পারে না। তবে এরা তেলে দ্রবীভূত হয়ে পাকস্থলিতে শোষিত হয়।
সালফার জাতীয় পদার্থ অ্যালিনের উপস্থিতির কারণে প্রাচীনকাল থেকে সারাবিশ্বে রসুন অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহ্রত হয়ে আসছে। সর্বাধুনিক গবেষণা মতে কাক্সিক্ষত উপকারিতা পেতে রসুন পিষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বাতাসে রেখে তবে ব্যবহার করা উচিত। কারণ রসুনের কোষীয় গঠনে অ্যালিন ও এনজাইম অ্যালিনেজ বিচ্ছিন্নভাবে থাকে। রসুন পিষলে বা চূর্ণ করলে এ দুই উপাদান পরষ্পরের সংস্পর্শে এসে অত্যন্ত শক্তিশালী নতুন যৌগ অ্যালিসিন গঠন করে, যা রসুনের গুণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। অ্যালিসিন তৈরি হওয়ার আগে যদি রসুন তাপে দেওয়া হয় তবে অ্যালিন ও অ্যালিনেজ নষ্ট হয়ে যায় বলে তা থেকে অ্যালিসিন তৈরির সম্ভাবনা থাকে না। রসুনের যে ঝাঁঝালো গন্ধ আমরা পাই তা এ অ্যালিসিনেরই গন্ধ। তাই বুঝতেই পারছেন, রসুন যতবেশী ঝাঁঝালো, এতে ততবেশি অ্যালিসিন আর এটি ততবেশি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।

রসুনের মতো পেঁয়াজও একই কারণে সব দেশে সমাদৃত। তবে পেঁয়াজ যত গাঢ় রঙ, ঝাঁঝালো স্বাদ ও গন্ধের হবে তত উপকারী।

আমরা অনেকেই ভাবি যে, রান্না করার ফলে সবজির গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। তবে বিষয়টি সবক্ষেত্রে খাটে না। হ্যাঁ, কাঁচা সবজি অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। তবে সে সঙ্গে তেলে ভাঁজা, সেদ্ধ, গ্রিল, তেল ছাড়া ভাঁজা সবই খেতে হবে যেখানে যেমন প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, রান্না করার ফলে কঠিন কোষ প্রাচীর ভেঙে যায় বলে শরীরের পক্ষে নিউট্রিয়েন্ট শোষণ করা সহজ হয়। এক্ষেত্রে গাজর ও টমেটোর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। গাজরের বিটা-ক্যারোটিন দেহে প্রবেশ করে ভিটামিন ‘এ’ তে পরিণত হয়। দেখা যায় কাঁচা অপেক্ষা রান্না গাজরে বিটা-ক্যারোটিনের পরিমাণ বেশি। তবে বিটা-ক্যারোটিন তেলে দ্রবীভূত হয় বলে তেল দিয়ে রান্না না করলে শরীর একে শোষণ করতে পারবে না। একইভাবে টমেটোর লাইকোপিন, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও টমেটোর লাল রঙের জন্য দায়ী, রান্না টমেটোতেই তা বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

জুঁই ইয়াসমিন, পুষ্টিবিজ্ঞান প্রশিক্ষক

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০