নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাসের বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় চুরি বন্ধ করা না গেলে, এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে না। এতে এলএনজি আনলেও গ্যাস সংকট নিরসন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শামসুল আলম।
গতকাল রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এলএনজির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এনার্জি বিটের রিপোর্টারদের সংগঠন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের (এফইআরপি) এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এফইআরপির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সঞ্চালনায় ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এতে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তাদির আলী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী।
এলএনজি আমদানিতে সম্ভাবনার পেছনে আতঙ্কও লুকিয়ে আছে-এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এলএনজি আসলেও জ্বালানি সংকট নিরসন হবে না। কারণ চাহিদা বাড়বে, নতুন সংযোগ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে কাউকে গ্যাস দেওয়াই হচ্ছে না। আবার কাউকে অতিরিক্ত গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দক্ষ লোকদের দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। একই সঙ্গে তাদের পেশাদারিত্ব নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরা কিছুই করছি না। আমরা অন্যের আবিষ্কার নিজেরা কপি করে প্রয়োগ করছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমাকে বলা হলো ৩২ ইঞ্চির পাইপলাইন বসালেই এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। পরে আবার বলা হলো আরও একটা ৪২ ইঞ্চির পাইপ লাইন বসানো প্রয়োজন। এখন আবারও বলা হচ্ছে ৫০ ইঞ্চির একটি পাইপ লাইন দরকার হবে। কেন একবারেই এলএনজি আমদানির শুরুতে তারা এটি ঠিক করতে পারল না।’ কেন তিনবার পাইপলাইন বসাতে হবে এমন প্রশ্ন তুলে প্রতিমন্ত্রী এসব কাজের সংশ্লিদের পেশাদারিত্বের সমালোচনা করেন।
তিনি আরও বলেন, এলএনজি আসলেও সিএনজি, এলপিজি থাকবে, তেল থাকবে। আমরা ইলেক্ট্রিক যানবাহন চালু করতে যাচ্ছি। গ্রামগঞ্জে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। চিন্তা করছি এসব যানবাহন চার্জ দেওয়ার জন্য চার্জ স্টেশন করব।
সেমিনারে, ‘এলএনজি আমদানি: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ম. তামিম। তিনি বলেন, এলএনজি ব্যবহার করতে হবে। চাহিদা পূরণের জন্যই এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের গ্যাসও উত্তোলিত হচ্ছে। তবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন আরও বাড়াতে হবে।
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তাদির আলী বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাপেক্সকে শক্তিশালী না করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে একটা বড় সমম্যা হলো সমন্বিত পরিকল্পনা না করা। এর ফলে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যায়। এলএনজির জন্য দুটি পাইপলাইন না করে যদি সঠিক ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি পাইপলাইন করা হতো তাহলে খরচ কমতো।
চুরি বন্ধ না হলে গ্যাস সংকট নিরসন হবে না
