নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোট গ্রহণের মাত্র ৯ দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সীমানা জটিলতা নিয়ে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই স্থগিতাদেশ দেন আদালত। গতকাল বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের বেঞ্চ রুলসহ নির্বাচন স্থগিতের এই আদেশ দেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে এই সিটির ভোট গ্রহণের কথা ছিল। প্রধান দুটি দলসহ সব দলের প্রার্থীরাই পুরোদমে প্রচার চালাচ্ছিলেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের গেজেট, চলতি বছরের ৪ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপন ও ৩১ মার্চ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল চ্যালেঞ্জ করে গতকাল এক নম্বর শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম সবুজ একটি রিট আবেদন করেন।
তার আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়েই হাইকোর্ট বেঞ্চ সিটি নির্বাচনের ভোট তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছেন। আদালতে রিট আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মো. রেজাউর রহমান রেজা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন তৌহিদুল ইসলাম।
আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি সাংবাদিকদের বলেন, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়নি। তাছাড়া অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়মও মানা হয়নি।
তাছাড়া ছয়টি মৌজার স্থানীয়রা দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং তাদের দুই জায়গায় কর পরিশোধ করতে হবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে ২০১৩ সালের গেজেট ও ভোটের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রজ্ঞাপন ও তফসিল চ্যলেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করা হয়, যেটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে নির্বাচন স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন আদালত।
সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্তির গেজেট এবং সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন ও তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ওই রুলে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-২), ঢাকা জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট নয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আবেদনকারী এর আগে একই বিষয়ে রিট করেছিলেন, সে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য। সরকার সেটি নিষ্পত্তি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ফলে আমরা মনে করি রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের আদেশটি কমিশনকে জানানো হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, আদালতের আদেশ কপি হাতে পাওয়ার পর আপিল করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর নির্বাচনের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সচিব খুলনায় রয়েছেন। তারা ঢাকায় ফিরলে কমিশনের বৈঠক বসবে। সেখানে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত
