প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
অবশেষে চীনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে অনুমোদন পেল এবং এটি পরে একটি ডিল হবে। ডিল হওয়ার পর এটির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে। এই ডিলে পুঁজিবাজারে রাতারাতি সুফল পাওয়া যাবে না। কৌশলগত অংশীদারের সুফল পেতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া নীতিনির্ধারক মহল থেকে মাঝেমধ্যেই বিচার-বিশ্লেষণ না করে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পরে আবারও তা না ভেবেই পরিবর্তন করায় আবার ভুল হয়। তত দিনে বাজার অনেক নেতিবাচক অবস্থায় চলে যায়, সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। এসব কথা উঠে আসে গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন দি ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর মো. সাজ্জাদুর রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহামুদউল হাসান খসরু, এফসিএ।
অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা, সঞ্চালনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়টির মনস্তাত্ত্বিক একটি ইতিবাচক প্রভাব হয়তো দ্রুতই বাজারে পড়বে। তবে কৌশলগত অংশীদারের সুফল পেতে হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ খুবই কম। ফলে চীন যেহেতু এখান থেকে রেভিনিউ আয় করবে, তাই অবশ্যই তারা চাইবে এখানে বাইরের ফান্ড আসুক। এছাড়া আমার জানামতে, চীনের একটি লক্ষ আছে, তারা প্রতিদিন দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো লেনদেনে নিয়ে যাবে এবং এটি না হলে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রেভিনিউটি আসবে না। সুতরাং এটি করতে হলে অবশ্যই দেশি-বিদেশি অনেক ফান্ড বাজারে আসতে হবে এবং এগুলো বাদেও আরও অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। কাজেই কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের অংশগ্রহণে দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটসহ সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নীতিনির্ধারক মহল থেকে মাঝেমধ্যেই বিচার-বিশ্লেষন না করে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পরে আবারও না ভেবেই পরিবর্তন করে এবং আবার ভুল হয়। তত দিনে বাজার অনেক নেতিবাচক অবস্থায় চলে যায়, সেইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। দেশের অর্থনীতি এখন অনেক বড়, প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের অর্থনীতি ৩০৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই অর্থনীতিতে আমাদের নিজস্ব ২৫টি কোম্পানি আছে, যাদের এক বিলিয়ন ডলার টার্নওভার এবং এক থেকে তিন বিলিয়ন ডলারেরও বাংলাদেশি কোম্পানি আছে। কথা হচ্ছে তাদের কতটুকু ভূমিকা আছে দেশের পুঁজিবাজারে। আর তারা যদি পুঁজিবাজারে না আসে তাহলে তো তাদের জোর করে বাজারে আনা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হয়। কিন্তু আমাদের নীতিমালাগুলো সক্রিয় নয় এবং নীতিমালাগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নীতিমালা একটি হয়ে আছে কিন্তু সেটি কাজ করছে কি না, সেটি নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই এই বিষয়টি সবার নজরে আনা খুবই জরুরি।
মাহামুদউল হাসান খসরু বলেন, কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনকে বাছাই করার জন্য বিএসইসিকে অবশ্যই সাধুবাদ দেওয়া দরকার। পাশাপাশি চীনের দুই বড় স্টক এক্সচেঞ্জকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করতে পারা ডিএসইর জন্য একটি মাইলফলক দিক বলা যায়। চীন বাজারে এলে প্রযুক্তিগত অনেক উন্নতি হবে, এতে বাজার সম্প্রসারণ হবে। তবে বাজারে সুশাসন না থাকলে এটির যে পরিমাণ সুফল পাওয়ার কথা সেই পরিমাণ সুফল আমরা পাব না। তাই বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই জরুরি একটি বিষয়। তাছাড়া দেশে আমাদের আইনি জটিলতা অনেক, যার কারণে একটি কাজ করতে বিভিন্ন সমস্যার সমুখীন হতে হয়। এই বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের আমলে আনা দরকার বলে মনে করি। এছাড়া বাইরে থেকে বিনিয়োগ ফ্লোটি যাতে সহজে আসতে পারে বাজারে, এর জন্য যেই সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকে সরাতে হবে। আর এই কাজে স্টক এক্সচেঞ্জকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করি।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম