মাসুম বিল্লাহ: প্রতি অর্থবছরে কতটি প্রকল্প সম্পন্ন করা হবে, তার একটি তালিকা করা হয়। কিন্তু কোনো অর্থবছরই সে লক্ষ্য অনুযায়ী শেষ হয় না প্রকল্পগুলোর কাজ। একই সঙ্গে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত করা হয় নতুন নতুন প্রকল্প। এতে পুরোনো প্রকল্পগুলো বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি নতুনগুলোয় অর্থ জোগান দেওয়ার চাপ বাড়ে। ফলে অনেক কম বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্পগুলো শুরু হয়। এতে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। বাজেট ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প ছিল এক হাজার ৩০৮টি। সংশোধিত এডিপিতে এবার সম্পন্নের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০০টি প্রকল্প। এর মধ্যে ৫২টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে না বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এগুলো আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে মেয়াদোত্তীর্ণ আরও ২১০টি প্রকল্প রয়েছে। সেগুলোও নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। তথাপি এগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে তারকা চিহ্নিত করে নতুন এডিপিতে রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পসহ আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৪৫১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এডিপিতে প্রতিবছর প্রকল্প সংখ্যা বৃদ্ধি বাস্তবায়ন দক্ষতা কমাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, বিভিন্ন মহলের সুপারিশে প্রতিবছর এডিপিতে নতুন নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে এডিপির আকার বাড়ানো হয়। প্রকল্প সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ বেড়ে যায়। আবার যেসব প্রকল্পে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়, তারা ঠিকমতো খরচ করতে পারে না। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে আগে প্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রকল্প প্রণয়ন করে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে এবং প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আগামী অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পগুলোর কারণে প্রতিবছর এডিপি প্রণয়নে জটিলতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের কর্মকর্তারা।
আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) খসড়া এডিপি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। সেখানেই আগামী অর্থবছরের এডিপি চূড়ান্ত হবে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছর বরাদ্দ ১৬ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বাড়ছে। আর বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ নির্ধারণ করা হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যার পরিমাণ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।