আমান গ্রুপের পোলট্রি খামারের কাছে ইটভাটা স্থাপনের উদ্যোগ

পলাশ শরিফ: রাজশাহীতে আমান গ্রুপের পোলট্রি খামারের কাছে ইটভাটা (ব্রিকফিল্ড) স্থাপনের তোড়জোড় চলছে। খামারের ক্ষতির আশঙ্কায় এরই মধ্যে ইটভাটা স্থাপনে আপত্তি জানিয়েছে রাজশাহী জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর। ইটভাটার অনুমতি না দিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ রাজশাহী ও বগুড়া পরিবেশ অধিদফতরে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ক্ষতি এড়াতে পরিবেশ দফতরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে হুমকির মুখে থাকা পোলট্রি খামারের মালিকপক্ষ।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আমান পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির পাশেই উপেন অটোমেটিক ব্রিকফিল্ড স্থাপনের উদ্যোগ চলছে। এজন্য এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছে উপেন্দ্র ব্রাদার্স অটো ব্রিকফিল্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইটভাটা স্থাপন করা হলে যানবাহন ও লোক সমাগম এবং শব্দ-বায়ুদূষণের কারণে প্রজনন খামারটির ক্ষতি হবে। কারণ ইটভাটার কার্বন মনো-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত ধোঁয়া যে কোনো প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই ইটভাটায় প্রতিনিয়ত লোকের সমাগম ও ট্রাক যাওয়া-আসার কারণে বিভিন্ন রোগের জীবাণু, দূষণ ছড়িয়ে খামারের সমূহ ক্ষতির শঙ্কা জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর।

আমান গ্রুপের সিনিয়র জিএম রবিউল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমান পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করছে। এখানে কোনো ইটভাটা হলে প্রজনন খামারটির পাশাপাশি পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। পরিবেশ অধিদফতর বিষয়টি আমলে নিলে একটি প্রজনন খামার ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের পক্ষ থেকে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে পাঠানো এক চিঠিতে সরকারি গেজেটে বলা হয়েছে ‘খামারের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভারী শিল্প স্থাপন করা যাবে না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আমান পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের ব্রিডার খামারের পাশে উপেন অটোমেটিক ব্রিকস ফিল্ড লিমিটেড নামে ইটভাটা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ প্যারেন্ট স্টক প্রজনন খামারটি প্রথম ও প্রধান শর্ত যথাযথভাবে জৈব-নিরাপত্তা মেনে খামার পরিচালনা করা। তাই ইটভাটা স্থাপনে জৈব-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। ইটভাটা স্থাপন করা হলে শব্দ ও বায়ুদূষণ, লোকসমাগমের কারণে খামারটি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

তবে ইটভাটাকে ‘দূষণমুক্ত’ বলে দাবি করছে স্থাপনের পরিকল্পনাকারী প্রতিষ্ঠান উপেন ব্রাদার্স অটো ব্রিকফিল্ড কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপেন্দ্রনাথ মণ্ডল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা পুরোপুরি দূষণমুক্ত। এজন্য আশপাশের পরিবেশ দূষিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত অটোব্রিকস মিলের সব শর্তই পূরণ করা হয়েছে। এখন পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছি।’

গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ২০১৬ সালের আগস্টে উপেন ব্রিকফিল্ড এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ব্রিডার খামারে বিভিন্ন সংবেদনশীল পোলট্রি রোগের টিকা দেওয়া হয়। যে কারণে খামারের জৈব নিরাপত্তার জন্য প্যারেন্ট প্রজনন খামার লোকালয়, দেশি মুরগি, হাঁস ও অন্য খামার থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে খুব কম অথবা লোকজনের সমাগম হয় না, এমন জায়গায় প্যারেন্ট প্রজনন খামার স্থাপন করা হয়। তাই আমান পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির কাছে ইটভাটা ব্রিডার খামারটি হুমকি ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ইটভাটায় শব্দ ও বায়ুদূষণ হবে, যা একটি প্রজনন খামার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। ইটভাটায় উচ্চ ও অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ প্যারেন্ট স্টকগুলোর শরীর বৃদ্ধি ও হজম ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাবে। সেগুলোর স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলবে। ফলে খামারের উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে। ব্যয়বহুল পোলট্রি টিকা দেওয়ার পরও যে কোনো সময় দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। ইটভাটার ধূলিকণা ও অন্য বর্জ্য বায়ু থেকে সৃষ্ট দূষিত পদার্থ প্রজনন খামারের উৎপাদন ব্যাঘাত ঘটাবে। এতে প্রজননকৃত ডিম  ফোটানোর অনুপযোগী হবে ও বিকলাঙ্গ ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হবে। এতে প্রান্তিক খামারিদের সুস্থ সবল ব্রয়লার বাচ্চা সরবরাহ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় তৈরি হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ওই ইটভাটা বন্ধের জন্য একটি আবেদন এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকা পরিদর্শনও করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুইপক্ষের মধ্যে শুনানি হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য বগুড়ায় পরিচালকের দফতরে ফাইল পাঠানো হয়েছে।’