রাজীব রাসেল, সিলেট: পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠেছে সিলেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার। অন্যান্য দ্রব্যের সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজ রসুনের দামও বাড়তে শুরু করেছে। সরকার ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাজারের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ সিলেটের ক্রেতাদের। এভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকায় বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তারা। আর বরাবরের মতোই নানা অজুহাতে বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে গত এক সপ্তাহে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের। পেঁয়াজ কেজি প্রতি আট থেকে ১০ টাকা এবং রসুন প্রতি কেজি ১০ থেকে ২৫ টাকা করে বেড়েছে। রমজানের আগে পেঁয়াজ রসুনের এ ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে শঙ্কিত ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন ভারতে অতিরিক্ত গরমের কারণে আমদানি করার সময়ে বেশিরভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশে এসে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। তবে গরম কমলে পেঁয়াজের দামও কমবে বলে দাবি তাদের।
এক সপ্তাহ আগেও সিলেটের পাইকারি বাজারে আকৃতি ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ২২ টাকায়। তবে গত দু’দিনে সিলেটের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকৃতি ভেদে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ টাকায়। আর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি। কোথাও কোথাও প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে দেশি রসুন প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং চায়না রসুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দেশি রসুন প্রতি কেজি ৩৫ টাকা এবং চায়না রসুন প্রতি কেজি ১০৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, ডুমরা, বেনাপোল ও হিলি এ চার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতে অতিমাত্রায় গরম থাকায় আমদানির সময়ে অধিকাংশ পেঁয়াজ গাড়িতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। তবে রসুনের দাম বাড়ার সঠিক কোনো কারণ তারা জানাতে পারেননি।
আর দাম বাড়ার বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে খুচরা বিক্রেতারা প্রায় দিগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সোনা মসজিদ থেকে সিলেটের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহকারী আবদুল মজিদ জানান, ভারতে গরম বেশি, তাই পেঁয়াজ আমদানির সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। কেজি প্রতি প্রায় আট টাকা করে বেড়েছে। তবে গরম কিছুটা কমলে পেঁয়াজের দাম আবার স্থিতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিলেট নগরীর কালিঘাট পেঁয়াজের আড়ৎ, রিকাবীবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, ব্রহ্মময়ী বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ৩২ টাকা করে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে সর্বনি¤œ ৩৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আবার নগরীর কয়েকটি আবাসিক এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে প্রতি কেজি পেয়াজ ৪৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর মদিনা মার্কেটের একটি দোকান থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এক কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা দিয়ে কিনেছি। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বিক্রেতারা। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও খুচরা বাজারে ৪০ টাকা বিক্রি হওয়ার মতো বাড়েনি।’
নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম আদায় করছেন অভিযোগ করে কয়েকজন ক্রেতা বলেন, নিয়মিত মনিটরিং থাকলে যার যেমন খুশি তেমন দাম আদায় করতে পারতো না। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক দেবজিত সিনহা বলেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দাম বাড়ার বিষয়কে কাজে লাগিয়ে কেউ অতিরিক্ত দাম আদায় করতে পারবে না। এ রকম কোনো কিছু ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রমজান সামনে রেখে সিলেটে বাড়ছে পেঁয়াজ-রসুনের দাম
