হামিদুর রহমান: মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফারে প্রায়ই প্রতারিত হন গ্রাহকরা। প্যাকের ইন্টারনেট শেষ হলে গ্রাহকের মূল ব্যালান্স থেকে টাকা কাটা শুরু হয়। ব্যালান্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি চলতে থাকে, যদিও ইন্টারনেট প্যাক শেষ হওয়ার পর পাঁচ টাকার বেশি কাটার সুযোগ নেই অপারেটরগুলোর। কিন্তু এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।
এদিকে কোনো অপারেটর ২০টি নিয়মিত প্যাকেজ ও ১৫টি বিশেষ (প্রমোশনাল) অফার মিলে সর্বোচ্চ ৩৫টি অফার দিতে পারবে বলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) নির্দেশনা রয়েছে, কিন্তু সেটিও মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অপারেটরগুলোকে সতর্ক করে দ্বিতীয় দফায় নির্দেশনা দিয়েছে বিটিআরসি।
সূত্র জানায়, মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার পরিচালনার জন্য বিটিআরসি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্দেশনা প্রদান করেছে। অপারেটরগুলো তা মানছে না, যা নির্দেশনা লঙ্ঘন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অপারেটরগুলোকে দ্বিতীয় দফায় আবারও নোটিস পাঠানো হয়েছে।
বিটিআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, অপারেটরগুলো বিভিন্ন অফার ও প্যাকেজ পরিচালনা করে প্রতি বছর গ্রাহকদের প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
গত সোমবার মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়, গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ভলিউম তথা এমবি শেষ হলে অর্থাৎ অফার শেষ হলে মূল ব্যালান্স থেকে অপারেটররা পাঁচ টাকার বেশি কেটে নিতে পারবে না। অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের ভিত্তিতে (পে-পার ইউজ) বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকার বেশি রাখতে পারবে না অপারেটরগুলোর। তবে কোনো গ্রাহক পাঁচ টাকার বেশি সীমা নিতে চাইলে তার অনুমতির ভিত্তিতে এ ধরনের সেবা দেওয়া যাবে। ইউএসএসডির মাধ্যমে গ্রাহকের এ অনুমোদন নিতে হবে, যদিও এটি মানা হচ্ছে না। প্রায়ই ইন্টারনেট প্যাক শেষে কোনো ধরনের নোটিফিকেশন তথা ম্যাসেজ দেয় না অপারেটরগুলো। উপরন্তু মূল ব্যালেন্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেট প্যাক পে-পার ইউজের আওতায় টাকা কাটতে থাকে। এতে মূল ব্যালান্স ফুরিয়ে গেলে মেসেজ দিয়ে জানানো হয়। ফলে প্রতারিত হন গ্রাহকরা।
এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নিয়মিত প্যাকেজ ২০টি ও বিশেষ (প্রমোশনাল) অফার ১৫টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য বিদ্যমান প্যাকেজ ও অফারের মধ্যে অপারেটরগুলো কোনটি রাখতে আগ্রহী, আগামী ১ জুনের মধ্যে অপারেটরগুলোর সে তালিকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ভয়েস কলের ক্ষেত্রে পালস ও কলরেটের ভিত্তিতে অপারেটরদের বিভিন্ন নামের প্যাকেজ চালু রয়েছে। এছাড়া ডেটাভিত্তিক সেবার জন্য ডেটা ভলিউম ও মেয়াদ বিবেচনায় আলাদা আলাদা প্যাকেজ রয়েছে অপারেটরদের। আর গ্রাহকদের অভিযোগ, একই ধরনের অনেক প্যাকেজ চালু করলেও তার মধ্যে নিজের প্রয়োজনীয় প্যাকেজটি পাওয়া যায় না। ফলে একই ধরনের একাধিক প্যাকেজের কারণে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন তারা।
এর আগে, ২০১৬ সালে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ ও মতামত জানতে প্রথমবারের মতো বিটিআরসিতে গণশুনানি আয়োজন করা হয়। এতে অপারেটরদের একই সেবার প্রয়োজনাতিরিক্ত প্যাকেজের বিষয়ে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষ দিকে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নতুন প্যাকেজের অনুমোদন স্থগিত করে বিটিআরসি।
বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের অতিরিক্ত প্যাকেজ থাকায় গ্রাহকদের বিভ্রান্তির বিষয়টি গণশুনানিতে তুলে ধরা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়া একই ধরনের একাধিক প্যাকেজ বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ।
উল্লেখ্য, দেশে মোবাইলে ফোনে ইন্টারনেট সেবা চালু হয় ২০০৪ সালে। এ সময় পি-১ প্যাকেজের মাধ্যমে সেবাটি চালু করে অপারেটরগুলো। পে-পার ইউজ প্যাকেজে একজন প্যাহক যে পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে, তাকে সে পরিমাণ বিল পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ এটি গ্রাহকের ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। তবে বর্তমানে এ প্যাকেজের ব্যবহারকারী নেই বললেই চলে।
বিটিআরসির নির্দেশনা মানছে না অপারেটররা
