রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ-গন্ধর্বপুর মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা মেরামত না করায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেখানকার প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা। সড়কটির এই এক কিলোমিটার অংশের অনেক স্থানই যেন পরিণত হয়েছে ডোবায়। কোথাও খানাখন্দে ভরা। কোথাও বড় গর্ত। আবার কোথাও হাঁটু পানি। ওই এলাকায় অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেছে। গড়ে উঠেছে জনবসতিও। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু সড়কটির উন্নয়ন আর হয়নি।
এদিকে রূপগঞ্জ উপজেলার শিল্পাঞ্চল খ্যাত তারাবো পৌরসভার কর্ণগোপ-গন্ধর্বপুর সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া না হলে তারা আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সত্তরের দশকে সড়কটি লোকজনের হেঁটে চলাচল উপযোগী ছিল। পরে ১৯৮৩ সালে তৎকালীন তারাবো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. শওকত আলী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কর্ণগোপ থেকে গন্ধর্বপুর পর্যন্ত মাটি ভরাট করে সড়কটি নির্মাণ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিউর রহমান সড়কটি সংস্কারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কর্ণগোপসহ আশপাশ এলাকাগুলোয় আনুপাতিক হারে ভোটার সংখ্যা কম ছিল। ফলে জনপ্রতিনিধিদের আনাগোনা ওই এলাকায় কম ছিল। পরে সেখানে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠা শুরু হলে জনবসতিও বাড়তে থাকে। এরপর থেকে সেখানে শিল্প-কারখানার মালিক ও জনপ্রতিনিধিদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। কিন্তু সড়কটির উন্নয়নের বিষয়ে তাদের তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
তারা আরও বলেন, কর্ণগোপ-গন্ধর্বপুর সড়কটি সংস্কার হলে আশপাশ গ্রামগুলোর মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। কিন্তু এ সড়কটির কারণে এখন ছেলেমেয়েরা ভালো স্কুলে যেতে পারে না। অসুস্থ কিংবা গর্ভবতী নারীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কাদা-পানি মাড়িয়ে বহু কষ্টে এলাকাবাসীকে যেতে হয় পাশের বাজারে। অথচ রাস্তা ভালো হলে মাত্র ১০ মিনিটেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাওয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, এ মহাসড়কের পাশঘেঁষেই গড়ে উঠেছে আলরাজি স্পিনিং, জিয়া স্টিল মিলস, আল আছোয়াদ স্টিল মিলস, গাজী পাইপ, গাজী ট্যাংক, হাতিম স্টিল, এমইবি শিট গ্লাস, মেট্রো স্পিনিং এবং ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় অধিকাংশ শ্রমিকই দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্ণগোপ-গন্ধর্বপুর সড়কের পাশের কর্ণগোপ, নোয়াগাঁও, বংসীনগড়, বোচারবাগ, নামা গন্ধর্বপুর, নারসিংগল, গন্ধর্বপুর, মাছুমপুর, বারৈইপাড়া, শান্তিনগর গ্রামে বসবাস করছেন।
কর্ণগোপ গ্রামের রজব আলীর বলেন, এত খারাপ রাস্তা আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। কাদা-পানি মাড়িয়ে পাশের বাজারে যেতে হয়। ব্যবসায়ী রহিম বক্স বলেন, ‘পোলাপানগো ভালা ইস্কুলে দিবার পারি না এই রাস্তার কারণে। বছর ভইরা রাস্তা খারাপ থাহে। মেঘ-বৃষ্টির দিনো কাদা-পানি থাহে। আর শীত সিজনে ধুলার জ্বালায় রাস্তা দিয়া হাঁটাও যায় না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার কয়েকজন জানান, সড়কটি যদি মেরামত না করা হয় তাহলে এলাকাবাসী মিলে ঢাকা-সিলেট সড়ক বন্ধ করে দেবেন তারা। প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে বলেও জানান তারা। তবে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এক কিলোমিটার সড়কের জন্য ৫০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
