কাজের কাজী

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এ রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের। ওই ট্রান্সপন্ডারগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই স্যাটেলাইট দিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।
এখন দেশে প্রায় ৩০টি স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। এসব চ্যানেল সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল, এমন বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুনতে হয় বছরে এক কোটি ৪০ লাখ ডলার (১১৮ কোটি টাকা)। তথ্যমতে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু-১ ব্যবহার করে এ কাজগুলো করতে পারবে বাংলাদেশ। এই স্যাটেলাইটের জীবনকাল ধরা হয়েছে ১৫ বছর। সে হিসেবে আগামী ১৫ বছর এই খরচগুলো বাংলাদেশের সাশ্রয় হওয়ার কথা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ থাকবে। এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এই স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য সরকারের গঠন করা বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি (বিসিএসবি) লিমিটেড কাজ শুরু করেছে।
দেশের ৭৫০ ইউনিয়নে এখন ফাইবার অপটিক ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। ইন্টারনেটবঞ্চিত এমন এলাকার মধ্যে রয়েছে পার্বত্য ও হাওর অঞ্চল। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। ঝড় বা বড় ধরনের দুর্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতেও কার্যকর হবে এ স্যাটেলাইট। বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে। তখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে। এছাড়া যারা ভি-স্যাট ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করছেন, তারাও স্যটেলাইট ব্যবহার করতে পারবেন। সব মিলে এই স্যাটেলাইটের
জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে আগামী সাত বছরের মধ্যে সে খরচ উঠে আসবে বলে মনে করে বাংলাদেশ সরকার।
তবে সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে এ স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে দুটো চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করেছেন। বলা হচ্ছে, স্যাটেলাইটের অবস্থান ও দূরত্বের কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো বর্তমানে অ্যাপস্টার নামে যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে সেটি বাংলাদেশের ওপরে ৯০ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। এর মাধ্যমে একদিকে দুবাই ও অন্যদিকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত সম্প্রচার সম্ভব হয়। এ বিষয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১১৯ ডিগ্রিতে। বাংলাদেশ থেকে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে এই স্যাটেলাইট থাকবে। ফলে এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত সরাসরি পৌঁছানো সম্ভব হবে না। আরেকটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছাতে হবে। বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জানা গেছে, তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো এটা ব্যবহার শুরু করবে। পরে ভালো মান পেলেই তারা বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০