ক্রীড়া প্রতিবেদক: নিউজিল্যান্ড সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটা বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল হার দিয়ে। এরপর ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজেও থাকলো তার রেশ। মানে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর গতকাল সাদা পোশাকের ক্রিকেটেও সেই একই লজ্জা পেলো সফরকারীরা। কিউই সফরের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৯ উইকেটে হেরেছে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। বলা যায়, বাংলাদেশের মাটিতে দুবার হোয়াইটওয়াশের শোধটা বেশ ভালোভাবেই নিয়েছে কেন উইলিয়ামসনের দল।
অথচ বৃষ্টির কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের তৃতীয় দিন ভেসে যাওয়ায় সবাই ড্র’র কথা ভাবছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তো সব সময় প্রতিপক্ষকে সবকিছু দিতেই অভ্যস্ত! গতকাল তা-ই করে এলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। স্বাগতিক বোলারদের উইকেট বিলিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত একদিন
বাকি রেখেই বড় হারে সফর শেষ করলো সফরকারীরা।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের চতুর্থ দিন লিড নেওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু প্রথম ইনিংসে শেষ জুটিতে ৯৮ রান তুলে উল্টো ৬৫ রান লিড নেয় নিউজিল্যান্ড। তাই বলে এই টেস্ট চতুর্থ দিনেই শেষ হয়ে যাবে এটা কী ভেবেছিলেন কেউ? কিন্তু সেটাই করে দেখিয়েছে সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের উইকেট দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের আরেকটি হতাশ দিনের গল্প। পুল করতে যেতে সীমানার কাছে আউট হলেন এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিলেন ফর্মে ফেরা সৌম্য সরকার। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো টাইগারদের ইনিংস। বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে সৌম্য বিদায়। এরপরই ৪ রানে জীবন পেলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সবার মতোই পথ হারালেন মাহমুদউল্লাহও। অথচ গতকাল এই ডানহাতির ব্যাট থেকে ভালো কিছু দেখার অপেক্ষায় ছিল টিম টাইগার্স। থিতু হতে পারেনি সাব্বির, নুরুল, মিরাজরা। তবে ইনিংসের শেষদিকে একটু লড়লেন তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। টেস্ট সিরিজ থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সম্ভবত এ দুজনই। বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন, শেষ বেলায় ব্যাটিংয়েও দেখালেন ঝলক। নবম উইকেটে দুজনের ৫১ রানের জুটিতে একটু বেড়েছিল ম্যাচের দৈর্ঘ্য।
যদিও ম্যাচ চতুর্থ দিনেই শেষ হয়েছে বাড়তি আধঘণ্টা সময়ের সুযোগে। যা পুরোপুরি লুফে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। জয়ের জন্য ১০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে ঝড়ো গতিতে রান তুলতে থাকেন স্বাগতিক দুই ওপেনার। দলীয় ৫৬ রানে জিত রাভালকে বোল্ড করে একমাত্র ব্রেক থ্রু এনে দেন কামরুল
ইসলাম রাব্বি। এরপর তো ডি গ্র্যান্ডহোমকে তিনে নামিয়ে বড় জুয়াই খেলেছে
নিউজিল্যান্ড। কিন্তু তাতে ভালোমতোই পাস করেছেন ডানহাতি এই পেসার। ১৫ বলে ৩৩ রানে ৪ ছয়ে করেছেন ম্যাচ শেষ!
এখন নিউজিল্যান্ড সফর শেষ। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই টাইগাররা হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। হয়তো এরই মধ্যে এ সফরের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে দেশ-বিদেশে। তারপরও সফরকারী দল হিসেবে কী কিউই কন্ডিশনে খুব খারাপ খেলেছেন তামিম-সাকিবরা? কোটি টাকার এ প্রশ্নটা না হয় তোলাই থাক। হয়তো এ সিরিজে পাওয়া শিক্ষা সাব্বির-সৌম্যরা আগামী সিরিজগুলোয় কাজে লাগাতে পারেন। আপাতত এটি ভাবা ছাড়া আর কীইবা করার আছে টাইগার সমর্থকদের?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৮৯
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯২.৪ ওভারে ৩৫৪ (নিকোলস ৯৮, টেলর ৭৭, লাথাম ৬৮; সাকিব ৪/৫০, কামরুল ২/৭৮, মেহেদী ২/৫৯, তাসকিন ১/৮৬)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫২.৫ ওভারে ১৭৩ (মাহমুদউল্লাহ ৩৮, সৌম্য ৩৬, তাসকিন ৩৩, কামরুল ২৫, নাজমুল ১২, তামিম ৮, সাকিব ৮, রুবেল ৭, মিরাজ ৪; ওয়াগনার ৩/৪৪, সাউদি ৩/৪৮, বোল্ট ৩/৫২, গ্র্যান্ডহোম ১/২৭)
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস (লক্ষ্য ১০৯): ১৮.৪ ওভারে ১১১/১ (ল্যাথাম ৪১*, গ্র্যান্ডহোম ৩৩*, রাভাল ৩৩; কামরুল ১/২১, তাসকিন ০/২১, মিরাজ ০/২৭, সাকিব ০/২৮)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: টিম সাউদি।
সিরিজের ফল: ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
Add Comment